এই গ্রন্থের গল্পগুলো অতি সাধারণ মানুষের গল্প। লোকালয়, নির্জন গ্রাম বা চলতি পথে দেখা মানুষদের গল্প। এক সময় প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে দেশে বা বিদেশে বেশ ঘোরাঘুরি করতে হয়েছিল, তখনই এই মানুষগুলোর সাথে আলাপ পরিচয়, জানাশোনা। কখনওবা আস্থার পথ ধরে গভীরে ঢুকে দেখা হয়েছে তাদের অনেকেরই মনের ভিতর বাড়ী। সেখানে রয়েছে কতোই না হাহাকার... জিভিয়িন ইলিচের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন বাংলাদেশী বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ, শত শত বছর আগে দেশান্তরী হয়ে গেছে তারা, তবুও তার হৃদয়ের গ্রন্থিতে কী টান! না দেখা এই দেশটির জন্য। নাইজেরিয়ান মেয়ে এলিজাবেথ, তার মেয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার টাকার জন্য এসে পড়েছে জার্মানীতে, ক্রমশ জড়িয়ে পড়েছে মানুষের আদিমতম পেশায় নিরুপায় হয়ে, হীমাষ্কের নিচের ঠান্ডায় সারারাত দাঁড়িয়ে থাকে হামবুর্গের অপ্রশস্থ গলির মুখে। ফরাসি মেয়ে এলেনার স্বপ্নের রাজপুত্র এক ভিনদেশী, অনেকদিন দেখা হয়না তার সাথে, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে নিঃশব্দে। মছির পাগল প্রখর রৌদ্রে বিশাল প্রান্তরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কথা বলে বাতাসের সাথে, তার অপরূপ সুন্দরী অন্তসত্ত¡া মেয়ে ‘কটি’ শুধু বাঁচবার জন্যই ঝাঁপ দিয়েছিল পানা পুকুরের অথই জলে। সন্দেহ নাই বিদেশ বিভুঁয়ে সল্প পরিচিত, অপরিচিত মানুষদের সাথে ভাব বিনিময় করতে ভাষা শক্ত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে বারবার। তবুও কেমন করে যেন এক সময় সাবলীল হয়ে উঠেছে ভাব বিনিময়ের পর্বগুলো। এখানে মানুষের আত্মগত প্রেরণাই সহায়ক হয়েছে সবচেয়ে বেশী। এই মনোজগতেরই যথাসাধ্য প্রকাশ ঘটেছে গল্পগুলোতে, অন্তত প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করা যায় শেষ অবধি পাঠকরা পছন্দই করবেন। গল্পগুলো একসাথে করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করার জন্য ক্রমাগত তাগিদ দিয়ে গেছেন আমার শ্রদ্ধার মানুষ অধ্যাপক আতাউর হক সিদ্দিকী, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক রাজুর প্রেরণা আমাকে উদ্যোগি করে তুলেছে, তার কাছে কৃতজ্ঞতা। অনুজপ্রতীম মহিউদ্দীন অনিকের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, এই গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে পূর্বাপর সকল কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং সার্বক্ষণিকভাবে পাশে থাকার জন্য। অতঃপর গ্রন্থিক প্রকাশনা কর্ণধার জনাব রাজ্জাক রুবেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমার মতো একজন অপরিচিত লেখকের গ্রন্থ প্রকাশ করে উৎসাহ দেবার জন্য।