পাকিস্তান আমলে তো সৈনিকদের জীবনযাপন নিয়ে বাঙালিদের কৌতূহলের সীমা ছিল না। তখন ছিল পাঞ্জাবিদের শাসন আমল। সশস্ত্র বাহিনী ছিল তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। শুধু গুটিকয় বাঙালি অফিসার ছিল সশস্ত্র বাহিনীতে। আর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল মাত্র সাতটি। তাও সৈনিকদের সবাইকে উর্দুতেই কথাবার্তা বলতে হতো। কারণ উর্দুই ছিল পাক-বাহিনীর মাতৃভাষা। বাঙালি সৈনিকদেরও উর্দু বলতে হতো। তবে তারা বলত তাদের মতো করে। লেখক একটি ঘটনা বলতে গিয়ে বলেন- আমার সিপাই সমুজ আলী মিয়ার সাথে একবার এক পাঞ্জাবির লেগে গেল ঝগড়া। সে রাগের চোটে বলল, ‘শালা, এক চড়ে তোমার গাল ফাটায়ে দেগা।’ পাঞ্জাবিরা বাঙালি সমাজকে শাসন করেছিল একমাত্র সেনাবাহিনীর জোরেই। পাক-আমলে পাঞ্জাবিদের সাথে যথেষ্ট অস্বস্তিকর জীবন কেটেছে বাঙালিদের। দেশপ্রেমের একক ঠিকাদার ছিল পাঞ্জাবিরা। সিভিল ও মিলিটারি-সমাজ জীবনে তখন ছিল বিস্তর ফারাক। আজকের বাঙালির মুক্ত স্বাধীন জীবনধারা কত সুখকর। যেসব মহান বাঙালি রাজনৈতিক নেতা পাঞ্জাবিদের কঠোর চোখ রাঙানির মাঝেও অসম সাহসে বাঙালিদের স্বতন্ত্র ভূমির জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাদের স্মৃতি হোক অম্লান। তাদের আত্মা শান্তি লাভ করুক। সৈনিকদের জীবন ঘিরে আছে কত ঘটনা, কত অ্যাডভেঞ্চার, হাসি কান্না। তেমনি একটি জীবনধারা ছিল লেখকের। তার সৈনিক জীবনের ফেলে আসা সৈনিক জীবন, হারিয়ে যাওয়া সৈনিক জীবন। এই বইতে লিখিত সবগুলো ঘটনা ও জীবন কাহিনি বাস্তব সত্য। একটিও সাজানো গল্প নয়।
লেঃ কর্ণেল (অব:) এম. এ. হামিদ, পিএসসি, ১৯৩২ সালে সিলেট জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৫৫ সালে কাবুল মিলিটারী একাডেমী থেকে কমিশন লাভ করে তৎকালীন ১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে এবং এরপর ১৯৬৩ সালে তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যােগ দেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সপরিবারে ৬ষ্ঠ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে পাকিস্তানের পেশােয়ারে আটকা পড়েন। পরবর্তীতে পেশােয়ারের একটি সামরিক ক্যাম্প থেকে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে বিপদসংকুল হিন্দুকুশ পর্বতমালা অতিক্রম করে আফগানিস্তান পৌছে স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিপদসংকুল পথে পলায়নের সেই কাহিনী অত্যন্ত উত্তেজনাপর্ণ ও আকর্ষণীয়, যা পাঠকদের বিমুগ্ধ করবে। বইটিতে তল্কালীন পাকিস্থানে আটকে পড়া বাঙ্গালীদের দুরবস্থাও যথাযথভাবে চিত্রিত হয়েছে।