কবিতা শীর্ষশিল্প। কবিতা অতীত-বর্তমান ও আবহমানের শাব্দিক সেতুবন্ধ। কবিতার শরীরে ছুঁয়ে থাকে সংযোগময়তা ও শিল্পময়তা। কবিতার লাবণ্য, বর্ণচ্ছটায়, চিত্রকল্পে ধ্বনির নান্দনিক অনুরণনে অন্তর্গত বোধ ও বার্তায় মোহিত, প্রাণিত হয়। কবিতাপ্রাণ মানস কবি তাঁর উপলব্ধি, দর্শন, সমাজ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণের প্রতিভাস রেখে যান কবিতা শরীরে। কবিতার নান্দনিক অভিযাত্রায় নবতম সংযোজন ‘পারিজাতের খোঁজে'। কবি ফাহমিদা লোপার এটি তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। এ দুটি মলাটের মধ্যে স্থান পেয়েছে ৫৯টি কবিতা। কবিতাগুলোর মধ্যে কবির ঐতিহ্য ও পরম্পরার প্রতি তীব্র ভালোবাসা, দেশপ্রেম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা, নাগরিক সভ্যতার সবুজ নিধনের আগ্রাসন কখনোবা প্রকৃতি বাংলার অনাবিল রূপ ও লাবণ্যের বৈচিত্রময় ছবি ধরা পড়েছে। কবি বস্তুগত সম্পদের থেকে আত্মিক ঐশ্বর্যের সন্ধানে তৎপর। তিনি ‘সোনাভরা রোদ কবিতায় লেখেন—'আমার মুঠোভরা অর্থ নেই/ আছে সেনার তরী/রূপশালি ধানে নবান্নের হাসি/ কৃষাণ-কৃষাণীর প্রাণে।' কবির কখনও দার্শনিক উন্মোচন—'চৌকাঠ না পেরুতেই যে অতীত ভুলে যায়, তার ভরাডুবি নিশ্চিত (বসন্ত বারবার)। বঙ্গবন্ধুর প্রতি কবির নিমগ্ন উচ্চারণ—'আগস্ট এলেই তুমি/অক্ষর হয়ে যাও/ শোকের ক্যানভাসে। 'নীলকমল' কবিতায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে কবির প্রতিবাদী কলমের প্রতিধ্বনি—'জেলের মাছ ধরা চিত্র আর বাঁশের সাঁকো/সবই এখন দখল নিয়েছ কংক্রীটের ব্রিজে। বিজয়ের শপথ কবিতায় কবি লেখেন— যেখানে বাংলা মায়ের ছবি/বিজয়ের শপথে ভালোবাসা বুনি'। প্রেমের কবিতায় অদ্বিতীয়া কবি, লেখেন— (দূর থেকে বহুদূরে)। তোমাকে ভুলতে চেয়ে/আরো বেশি ভালোবাসি/এতটা গভীরে বেঁধে ফেলেছো/ চাইলেও পারিনা দূরে সরে যেতে।' অথবা 'তুমি এলে পূর্ণিমা তিথি, তুমি এলে জ্যোৎস্না বুনি'। ‘পারিজাতের খোঁজে' কবিতায় কবি লেখেন-‘আজও ফুল ফোটে/পাখি গান গায়। ছন্দের তালে/ শুধু আমাদের ভোরবেলা আসে/ আতঙ্ক, জরা নিয়ে আবার প্রকৃতির মোহময় রূপমুগ্ধতায় কবির অনুভবী শব্দমালা—‘শতাব্দীর সকাল প্রত্যয় খোঁজে পারিজাতের সুরে/চল ঘুরে আসি মেঘের দেশে, মেঘবালিকার বেশে (শরৎ নীলে)। বৈচিত্র্যে ভরা কবির কবিতা নিজস্ব কাব্যভাষা নির্মাণে তৎপর। যেখানে প্রকৃতি-মানুষ-মানুষের উত্তরণের স্বপ্ন মিলেমিশে একাকার। কবির লেখনী প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিল আগামীর দিকে। মানবতাবাদে জাগ্রত কবির কবিতা পাঠকনন্দিত হবে, এ আমার বিশ্বাস। আমার অনেক অনেক শুভকামনা রইল। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় (বিশিষ্ট কবি, পঞ্চম প্রজন্ম, ঋষি বঙ্কিম পরিবার)
কবি ফাহমিদা লোপা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক সম্মান C স্নাতকোত্তর এবং ডিপ-ইন-এড কোর্স শেষ করেই পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন ১৯৯৬ সালে। জন্মসূত্রেই ঢাকাতে বসবাস। যদিও তিনি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ার কৃতি সন্তান। পারিবারিকভাবেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে বিচরণ ছোটবেলা থেকেই, আর লেখালেখির সাথে জড়িত পাঠশালা বয়স থেকে। বিভিন্ন পত্রিকা ও কলেজ বার্ষিকীতে নিয়মিত লিখছেন। ফেসবুকই মূলত তার লেখালেখির জগৎ। কবিতার পাশাপাশি তিনি ছোট গল্পও লিখেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সুরের আকাশে’, ‘বহতা নদীর প্রাণ'। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে সুপরিচিত ও আলোকিত মুখ।