হাওয়াই-এর হাওয়ায় ভেসে স্কুল অফ ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজম্যান্ট, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই-এ ‘এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট ফর ট্যুরিজম সংক্ষেপে এডিট কোর্সে অংশ নেবার জন্যে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশন বা পাটা স্কলারশীপ লাভ করি। ওটি ছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে পর্যটন শিল্পে প্রথম কোনো মানুষের অংশগ্রহণ। সর্বমোট দশটি দেশ থেকে দশজন পর্যটন শিল্পের সরকারী-বেসরকারী পর্যটন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কোর্সটি ছিল একটি অনন্য সাধারণ প্রশিক্ষণ। এমনিতেই ইউনাইটেড নেশনস্ ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও) এর ইউনিভার্সিটি রেটিং অনুযায়ী ওটাই প্রথম। তার ওপর পাটার জন্মস্থান এই হাওয়াই দ্বীপের সৌন্দর্য ও আকর্ষণে এতই মুগ্ধ ছিলাম যে, কি করে একমাসের ওপর কেটে গেলো তা টেরই পেলাম না। ছোটবেলা থেকেই ‘হাওয়াই ফাইভ ও’ টিভি সিরিয়াল দেখেই হাওয়াই-এর সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন। বড়বেলায় ‘বে-ওয়াচ’ দেখে দেখে সেই সৌন্দর্য এবং দেখার তৃষ্ণা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিলো। তাই হাওয়াই-এ যাবার বিষয়ে খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম।
ওদিকে আবার ক্লাশের দশজন বন্ধু এবং ইউনিভার্সিটির কয়েকজনের সাথেও অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক কখনো ভোলার নয়। মোট কথা, হাওয়াই ভ্রমণে সেদেশের পর্যটন শিল্প, এর অর্থনৈতিক কার্যকারিতা দেখে এবং এর সাথে নিজ দেশের পর্যটনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে যারপরনাই হতাশ হলাম। পর্যটনে উন্নত দেশগুলোকে যতই দেখি, ততই নিজ দেশের পশ্চাৎপদ পর্যটন শিল্প সামনে প্রকট হয়ে ওঠে। ছোট একটা দ্বীপ রাজ্য হয়েও শুধু পর্যটন শিল্পকে পুঁজি করেই হাওয়াই বিশ্বের বুকে অনন্য স্থান করে নিয়েছে। এই বইয়ে যাওয়া-আসার যাত্রাবিরতিকালে নিউইয়র্ক এবং সানফ্রান্সিসকোর কিঞ্চিৎ বর্ণনাও আছে। ফলে বইয়ের বৈচিত্র্যও কিছুটা বেড়েছে। প্রকাশক বন্ধু ম্যাগনাম ওপাসের কর্ণধার আনোয়ার ফরিদীর উৎসাহ যথারীতি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বইটি পাঠক আর বন্ধুমহলে সমাদৃত হলে ভালো লাগবে। আসুন না, হাওয়াই-এর হাওয়ায় ভেসে বেড়াই কিছুক্ষণ। তৌফিক রহমান ঢাকা।
তৌফিক রহমান আপাদমস্তক সংস্কৃতিমনস্ক একজন মানুষ। ছাত্রাবস্থায় আবৃত্তি ও নাট্যচর্চার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। আবৃত্তি সংগঠন 'ক'জনার' প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলেন। নাটকের দল 'দেশনাটক'-এর সঙ্গে যুক্ত আছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত দেশের প্রথম অভ্যন্তরীন পর্যটন বিষয়ক অনুষ্ঠান 'বাংলাদেশ ভ্রমণ'-এর মূল পরিকল্পক ও উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগতভাবে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পর্যটন প্রতিষ্ঠান 'জার্নি প্লাস'-এর প্রধান নির্বাহী। ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন দীর্ঘদিন। এছাড়াও তিনি ট্যুরিস্ট গাইড এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশনের একজন উপদেষ্টা। ১৯৯৯ সালে বেলজিয়ামের Wes Institute থেকে Tourism Marketing Planning বিষয়ে, ২০০৩ সালে আমেরিকার হাওয়াই-এ অবস্থিত University of Hawaii থেকে এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ফর ট্যুরিজম (EDIT) কোর্স, ২০০৪ সালে শ্রীলংকায় MICE Management কোর্স এবং ২০১৫ সালে হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি থেকে পর্যটন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ কৃতিত্বের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগে অতিথি প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্রমণ করেছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, জাপান, চীনসহ পৃথিবীর ৫০টিরও অধিক দেশ।