উনসত্তরে যদি আমার বয়স ষোল বা আঠারো হতো তাহলে আমি দূরদর্শী দুরন্ত সর্বজয়া কাল উত্তীর্ণ বিশুদ্ধ আর শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা হতে পারতাম। হতে পারতাম প্রেম পূজারী উর্বশী বিবাগী সাবিত্রী রণ—ক্লান্ত বীরাঙ্গনা। লাল গোলাপ হাতে নিয়ে আমৃত্যু প্রতিক্ষার অগ্নি শিখা প্রজ্জ্বলিত করে প্রতিক্ষার প্রহর কাটাতাম রেসকোর্স ময়দানে অবিশ্রান্ত অবিনাশী জনস্রোতে। সাদা পাঞ্ছাবির উপর হাতকাটা কালো কোট পরিহিত সেই অজেয় চিরসবুজ শুদ্ধান্ত সূর্য প্রমিকের জন্যে প্রেমের মাইলফলক হয়ে হেটে যেতাম দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ উন্মুক্ত প্রান্তর সুদৃঢ় নগ্ন পায়ে। বুলেট বেয়োনেট টিয়ারগ্যাস হাজার ব্যারিকেড কোন কিছুই আমায় দাবিয়ে রাখতে পারতোনা। সেই রণাঙ্গনের দুঃসাহসী ব্জ্রকন্ঠি মোহন প্রেমিকের জন্যে লাল সবুজ নিশান উড়িয়ে ছুটে যেতাম রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে, পেরিয়ে যেতাম অজস্র কারাগারের সুরক্ষিত কাঁটাতার বেষ্টনী সুউচ্চ প্রচীর দেয়াল, উৎসর্গ করে দিতাম স্বপ্নঘোর উদয়াস্ত জীবন যৌবনের স্বপ্ন মগ্নতার প্রেমাঞ্ছলী উত্তাল জনস্রোতে মিছিলে শ্লোগানে। রাবিন্দ্রীয় সুর ছন্দে ব্যকুলতায় হারাতাম বিরহ বিধুর ঝংকারে “আমি তোমারো বিরহে রহিব বিলীন তোমাতে করিব বাস, আমারো পরাণ যাহা চায়” অথবা “আমি তোমারো সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ”। দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ অমানিশা নির্ঘুম কাটাতাম বেলা অবেলায় দিব্যলোকে সহস্র রাত। কোথাও থমকে যেতোনা জীবন অসুস্থ সমাজের পচন অমানবিক ব্যাধি পাষবিক হিংস্রতায় কদাকার কদর্য কোলাহলে। যৌবনের গান হতো যুদ্ধজয়ের। কৃষক শ্রমিক বেনে মজদুরের গায়তি শাবলের সুর হতো মহাসঙ্গীতের। যদি জানতে চাও কে সেই বীরপ্রতীম সত্য সিদ্ধ অপরাজেয় সিদ্ধার্থ প্রেমিক? আমি বলবো যার রক্তে টগবগিয়ে উঠে দেশ—জাতির সাম্যবাদ, সমাজ সংস্কার স্বচ্ছ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। কুসংস্কার হীন বাঙালি চেতনার ভাষ্যকার সবার উপরে মানুষ সত্য, মানবিক মনুষ্যত্ব দেবত্বেরই সমান তার উপর আর কিছুই নেই। তবুও যদি জানতে চাও তার নাম, আমি গলা চড়িয়ে বজ্র কন্ঠে তার নাম উচ্চারণ করতাম, সে আর কেউ নয় বাংলার আকাশে একটি মাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র নীল ধ্রুব তারা কালজয়ী ধীমান পুরুষ প্রেমিক পুরুষ বিশ্ব বিজিত মহান রক্তলাল আরক্ত সূর্য রাঙা ভোরে উদীয়মান বাঙালী জাতির জনক বীর বিক্রম বাঙালীর বিবর্তন গৌরবের আরেক নাম, বাঙালি জাতির জনক অবিসংবাদী জ্যোতির্ময় পুরুষ আপামর বাঙালির অহংকার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।