রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ এমন একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তি স্তরে এবং সম্প্রদায় স্তরে আকৃতি লাভ করে। এর মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রেরণ করা হয়। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি রাজনৈতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার এবং চলমান রাজনৈতিক ধারা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া কতগুলো মাধ্যমকে বিজড়িত করে যার মধ্যে পরিবার, সঙ্গী দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং গণমাধ্যম অন্যতম। বর্তমান গ্রন্থে রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে এসব মাধ্যমের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রাখাইন সম্প্রদায় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর। অনগ্রসর জাতি হিসেবে রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলোর ভূমিকা কিরূপ তা জানা আবশ্যক। আর এ লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়ের উপর গবেষণা পরিচালিত করে বাংলাদেশের রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান এবং এই জ্ঞান অর্জনে মাধ্যমগুলো কতটুকু ভূমিকা পালন করছে তা জানার জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে গবেষণার বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য, গবেষণা পদ্ধতি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের একটি তাত্তি¡ক আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান এবং এই জ্ঞান অর্জনে মাধ্যমগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে অধিকাংশরই জ্ঞান সীমিত। তবে স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলা সম্পর্কে অধিকাংশরই জ্ঞান রয়েছে। জ্ঞানের উৎস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পরিবার রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের প্রাথমিক মাধ্যম হলেও বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক বিষয়ে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। আবার সঙ্গীদলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলও তেমন কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে না। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বশেষে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যে, বাংলাদেশের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর মতো রাখাইন সম্প্রদায়েরও রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানের মাত্রা স্বল্প। রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সবগুলো মাধ্যমের ভূমিকা থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এক্ষেত্রে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চলকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
লেখক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৫ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় Political Violence. Religious Extremism and Political Conflict, Religion and Corruption, Race and Ethnic Politics, Religion and Politics, Political Sociology। এ বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ রয়েছে তাঁর বর্তমান গবেষণা প্রকল্পগুলোর মধ্যে "Constructing the Others of Ethnic Communities by the Dominant Community in Bangladesh: How Do They Do It?," "Examining Religious Extremism and Political Violence of Hefazat-e-Islam Bangladesh," এবং "Religious Extremism and Political Violence in Myanmar: An Understanding from Rohingya Crisis" অন্যতম।