পরবর্তীতে কবি মিজাহারুল ইসলাম তাঁর লেখা দুইটি কবিতার বই আমাকে উপহার দিলেন। এই কবিতার বই দুইটি পড়েই আমি তাঁর কবিতার ভক্ত হয়ে গেলাম। প্রতিবছর বই মেলায় তাঁর কবিতার বই প্রকাশিত হয়। আমি তাঁর বই পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। এবছর তাঁর যে বইটি বের হচ্ছে তার নাম ‘সোনালি ডানার পাখি’। বইটির প্রতিটি কবিতা আমি পড়েছি। ছন্দ মিলের কবিতা। প্রকৃতি প্রেম, মানব প্রেম, জাগতিক প্রেম, ঈশ্বর প্রেম প্রতিটি প্রেম তিনি ছন্দে ছন্দে ব্যক্ত করেছেন। এক কথায় অসাধারণ। প্রতিটি কবিতাই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যেমন আগুন লাগা ফাগুন কবিতার দুটি লাইন- আগুন লাগা ফাগুন আসে- তোমার রূপের গুণে শ্যামা দোয়েল গান গেয়ে যায় রুক্ষ নিঠুর বনে। কি অসাধারণ! ফাগুনকে এভাবে এর আগে কোন কবি বর্ণনা করছে কিনা আমার জানা নাই। আবার, ‘সোনালি ডানার পাখি’ কবিতার এক যায়গায় তিনি লিখেছেন- মনে পড়ে, মন পোড়ে- জমাট বিরহ ঢের বিরহ বিরোধ করে অবরোধ- বুকে এসো ফের। আহা! ভালোবাসার কি হাহাকার! এমন ভাবে আগে কেউ বলেনি। এমন করে আগে কখনও শুনিনি। অমর অসুখ কবিতায় তিনি লিখেছেন- জোছনা ফোটা মুখটি যেন প্রেমের বিষে নীল গভীর প্রেমের জবর দখল সমস্ত মন দিল। লাল নীল শৈশব কবিতায় তিনি আরও লিখেছেন- এখানে তারা রোজ দিশেহারা রাতের মায়াবী চাঁদ জলে স্থলে নানা কৌশলে করে জোছনার চাষাবাদ। আহা! চাঁদ, জোছনাকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর পর এভাবে আর কেউ ভাবেনি। এমন অসংখ্য কবিতা আছে কবি মিজাহারুল ইসলামের ‘সোনালি ডানার পাখি’ কাব্যগ্রন্থে। আমার বিবেচনায় ‘সোনালী ডানার পাখি’ একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কাব্যগ্রন্থ। যে পড়বে তারই ভালো লাগবে।
মিজাহারুল ইসলামের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কাউরাট গ্রামে। তাঁর জন্ম ১৯৮৬ সালের পহেলা মার্চ। তিনি সাজেদা আক্তার ও মরহুম সোনা মিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান। নিজ গ্রাম কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মিজাহারুল ইসলাম ২০০১ সালে কেন্দুয়া জয়হরী স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৩ সালে। কেন্দুয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ২০০৮ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে (সম্মান) ডিগ্রি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে মাস্টার্স ইন গভর্নেন্স স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১২ সালে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী উম্মে সালিক রুমাইয়া সিনিয়র সহকারী সচিব (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। মিজাহারুল ইসলাম ও উম্মে সাদিক রুমাইয়া দম্পতির দুই সন্তান মাহজাবিন সায়র মৃন্ময়ী ও মাধুর্য সায়র উচ্ছ্বাস। প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থ: 'মৃন্ময়ী', 'অবাক জোছনা', 'সোনালি ডানার পাখি'। উপন্যাস: নক্ষত্র নগর। এছাড়াও 'আমি কবি নই শব্দ শ্রমিক', 'নৈঃশব্দ্যের কাব্য', 'নীল জোছনা', 'শতকবিতা' নামের চারটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।