আমরা যদি স্বাধীন বাংলাদেশকে পুরনো আয়নায় দেখি একবার, তাহলে দেখব; পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত তেইশ বছরের জমানো ব্যাথা-বেদনা-বঞ্চনা-অত্যাচার-নিপীড়ন-হত্যা-ষঢ়যন্ত্র আর না পাওয়ার একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই ইতিহাসকে আমরা যদি এক নজরে কিছুটা হলেও দেখতে পারি তাহলে কেন আমরা মুক্তিযুদ্ধে জড়ালাম বা ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য হলাম তা পরিস্কার হবে আমাদের কাছে। এখানে একটি উদাহরন দিলেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে যেমন, ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের অধীন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন পাকিস্তানের একটি অংশ হয় পূর্ববাংলা যার নাম পরবর্তীতে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় পূর্ব বাংলায় ছিল ১১টি কাপড়ের মিল আর পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ মিলে ছিল ৯টি কাপড়ের মিল। সেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলায় কাপড়ের কল মোট ছিল মাত্র ২৬ টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে সেটির সংখ্যা হয়ে গিয়েছিল ১৫০টি । এরকম হাজারো না পাওয়ার ঘটনায় নিচের বঞ্চনার চিত্রটি দেখলে সহসাই বুঝতে পারব কেন বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিল। যেমনঃ ১. একটি দেশ কিন্তু দুই ভূ-খন্ডের মধ্যে হাজার মাইলের ব্যবধান ২. ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামোর চিন্তাভাবনা ৩. পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সভ্যতার অ-মিল ৪. সাহিত্য সংস্কৃতিতে অ-মিল ৫. ভূ-প্রকৃতিগতভাবেও অ-মিল ৬. ভাষা আন্দোলন থেকে মাতৃভাষা আন্দোলন ৭. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্বেও বাঙালিদেরকে অবহেলা করা ৮. পূর্ববাংলার আয় বেশি সত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানে বেশি ব্যয় করা ৯. পূর্ববাংলায় লোকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্বেও বৈদেশিক সাহায্যের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যায় করা। ১০. পূর্ববাংলার তুলনায় শিক্ষা ব্যায় পশ্চিম পাকিস্তানে বেশি করা ১১. পূর্ববাংলার তুলনায় প্রতিরক্ষা ব্যায় পশ্চিম পাকিস্তানে বেশি করা ১২. পূর্ববাংলার তুলনায় চাকরিতে যোগদান এবং পদোন্নতিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে বেশি প্রাধান্য দেয়া। ১৩. পূর্ববাংলার তুলনায় কৃষি বিকাশের ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানকে বেশি প্রাধান্য দেয়া ১৪. যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও সরকার গঠনের পরে বাঙালিদেরকে শাসন ক্ষমতা থেকে অন্যায়ভাবে অপসারন করা ১৫. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা ১৬. ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বা পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষাকে উপেক্ষিত রাখা বা পূর্বপাকিস্তানকে রক্ষায় কোন ব্যবস্থা না নেয়া। ১৭. ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার পরে পূর্ববাংলার জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যা ১৮. ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলা ১৯. ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থান ২০. ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকায় সাইক্লোনের কারণে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও কোন সাহায্য-সহযোগিতা না করা ২১. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববাংলার আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুষ বিজয়ের পরেও সরকার গঠন করতে না দেওয়া।
মিনার মাসুদ পড়াশোনা করেছেন মাল্টিমিডিয়া সিস্টেমস এন্ড এ্যাপ্লিকেশন নিয়ে। ছাত্র জীবন থেকেই যুক্ত আছেন লেখালেখি আর সংবাদ মাধ্যমের সাথে, গবেষণা করছেন মুক্তিযুদ্ধের বিষয় ‘গণকবর, বধ্যভূমি ও প্রতিরোধ যুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন ভিজুয়্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া ম্যাটেরিয়াল ডেভলপমেন্টে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন। আর্কিওলজিতে টেকনোলজি হচ্ছে তার বর্তমান প্রকল্প। ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শণীকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের জন্য। তার প্রত্নতাত্ত্বিক থ্রি-ডি কাজের মধ্যে রয়েছে খলিফাতাবাদ, সোমপুরা মহাবিহারা, কান্তজিউর মন্দির, লালবাগের কেল্লা, পানাম নগরী, মহাস্থান গড়, উয়ারি বটেশ্বর, নাটেশ্বর, বড় কাটারা, ছোট কাটারা, ভিতর গড় ইত্যাদি। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে ইতোমধ্যে তার দুটি রচনা বিদেশের জার্নালে প্রকাশ ও ব্যপক প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত বই সমূহের মধ্যে- মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল, মহানায়কের মহাকাব্য, কেন তিনি জাতির পিতা, মমতাময়ী, ঝালকাঠিতে বঙ্গবন্ধু, শ্যামনগরের জয়ীতা, প্রত্নতত্ত্বের শিশুপাঠ, পতিতা চেনা যায়-পতিত চেনা দায়, ব্র্যাক মোহনায় কিছুটা সময়, এক পুলিশের রাত-দিন, প্রসবিনী-১, ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের জামদানি উল্লেখযোগ্য।