গাঙ্গেয় ব-দ্বীপীয় অঞ্চলের একটি জেলা ফরিদপুর। এই জেলা বাউল, মরমী এবং মুর্শিদী গানে সমৃদ্ধ। একটি লৌকিক আধ্যাত্মবাদী সাধন-ভজন সম্প্রদায় যাঁরা উন্মুক্ত মতাদর্শে বিশ্বাসী, তাঁদের প্রচেষ্টায় এক একটি ঘরানার মাধ্যমে এতদঞ্চলসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৃতপ্রায় অন্যান্য ব-দ্বীপ অঞ্চলে এ গানের স্পর্শক প্রসারণ ঘটে। তৎকালীন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বাউল মতবাদে বিশ্বাসীদের লোকায়িতধর্ম, শাক্ত, যোগ-সাধনা; বৌদ্ধসহজিয়া মত, তন্ত্র, বৈষ্ণব রসবাদ; শাহ সুলতান রুমির (১০৫৩ খ্রি.) মরমীবাদ; দেশীয় সংস্কার, হাজার বছরের আবহমান লোকাচার; ইরানের সুফিসাধকদের 'সামা' গজলের উত্তরসূরীরূপে মুর্শিদী, মারুফতি, মাইজভাণ্ডারী ও সুরেশ্বরী গানের উদ্ভব হয় এবং সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই আলোড়নের বাহ্যরূপ ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয় প্রয়াস। দক্ষিণ ভারতের ভক্তিবাদ, উত্তর ভারতের সন্তধর্ম এবং বাংলার বৈষ্ণব ও বাউল মতবাদ সুফিমতের প্রত্যক্ষ প্রভাবের ফলস্বরূপ। এখানে হিন্দু-মুসলমানের বিপরীতমুখী ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ সমন্বয় দেখা যায়। সিরাজ সাঁই, লালন ফকির, কাঙ্গাল হরিনাথ, পাঞ্জুশাহ, পাগলা কানাই, হাছন রাজা, তিনু শাহ, মেছের শাহ, যাদুবিন্দু শাহ, চণ্ডী গোঁসাই, আহম্মদ ফকির, হালিম বয়াতি, মহিন সাঁই প্রমুখের জীবনভাবনায় বিশেষ বিশেষ সাধন মার্গকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সাধনসঙ্গীত রচিত হয় এবং কালক্রমে চরম উৎকর্ষ লাভ করে।
ড. মাসুদ রেজা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি ভুবনে বহুমাত্রিক কীর্তিমান। একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, স্থানীয় ইতিহাসবিদ, ফোকলােরিস্ট প্রতিষ্ঠাতা ‘চর্যাপদ', ‘সুজন সংঘ’ ও ‘ব-দ্বীপ বাংলা হেরিটেজ'। সম্পাদক গবেষণা ত্রৈমাসিক ‘চাষ' যুক্ত আছেন ‘আর্কাইভ অব হিস্টি ট্রাস্ট-এর সম্পাদনা পরিষদে। আজীবন সদস্য বাংলা একাডেমি'র। জন্ম ১৯৫৫ সালে ফরিদপুরে। উচ্চশিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি স্থানীয় ইতিহাস ও ফোকলাের বিষয়ে। ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক ডি-লিট (এক্ষেত্রে বৃহত্তর ফরিদপুরে তিনি প্রথম ব্যক্তি)। বত্রিশ বছর কর্মরত ছিলেন সরকারি মুখ্যপ্রতিষ্ঠান বিসিক-এ গবেষণা ফেলাে হিসেবে কাজ করেছেন বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামাজিক ও বিজ্ঞান গবেষণায়। UNESCO-49 Safeguarding Intangible Cultural Heritage-এ মাঠপর্যায়ের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন BARD, UNDP, ILO, SCITI, INESBUD CGI ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছিলেন জাবি'র ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী ও ভারতের উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এ কাজ করেছেন ছাত্রজীবনে। প্রকাশনা ২৫টি গবেষণা প্রবন্ধ দু’শতাধিক উল্লেখযােগ্য সম্মাননা- পদ্মা পুরস্কার, জাকসু পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন ও কবি সূফী মােতাহার হােসেন স্বর্ণপদক, কলকাতা বেহালা অভ্যুদয় সম্মাননা এবং আজীবন সম্মাননা দিগন্তধারা ও কবি জসীম উদ্দীন পরিষদ।