বারো বছরের মা মরা মেয়ে জুঁই। উচ্ছল, চঞ্চল মেয়েটা দাদা দাদির কাছেই খুশিমনে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু আকস্মিক এক ঘটনা ছোট্ট মেয়েটার জীবনটা তছনছ করে দেয়। আহারে জীবন উপন্যাসটির শুরু জুঁইয়ের বারো ব... See more
TK. 380 TK. 281 You Save TK. 99 (26%)
কমিয়ে দেখুন
আর মাত্র ৩দিন বাকি, বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
আর মাত্র ৩দিন বাকি, বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
বারো বছরের মা মরা মেয়ে জুঁই। উচ্ছল, চঞ্চল মেয়েটা দাদা দাদির কাছেই খুশিমনে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু আকস্মিক এক ঘটনা ছোট্ট মেয়েটার জীবনটা তছনছ করে দেয়। আহারে জীবন উপন্যাসটির শুরু জুঁইয়ের বারো বছর বয়সে ঘটে যাওয়া সেই দুঃখজনক ঘটনা দিয়ে। সেই ঘটনার প্রভাব জুঁইয়ের মনোজগৎ একেবারে তোলপাড় করে দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর এক অভ্যাসের। জীবনের ছোটো বড় সব কষ্ট থেকে ক্ষণিক মুক্তি পেতে জুঁই নিজেই নিজেকে কেটে, ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। জুঁইয়ের ভাষায়, "রক্তেই আমার মুক্তি, রক্তেই আমার স্বস্তি"। নিজের মনেই সারাটাক্ষন যুদ্ধ করে করে যৌবনে পা দেয় জুঁই। মানসিকভাবে অসুস্থ এই জুঁইয়ের জীবনে প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ, কষ্ট, ভুল, যৌনতা, রক্তাক্ততা, শঠতা, প্রাচুর্য সবই আছে, শুধু নেই একটু মানসিক প্রশান্তি, শুধু নেই একটু স্বস্তি। মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসে জুঁইয়ের মনোজগতের ঘাত-সংঘাতের মধ্যে দিয়েই ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় ওর জীবন। অতীত এবং বর্তমানে দোদুল্যমান সেই জীবন। একটু স্বস্তি আর একটু শান্তির সন্ধানে প্রতিটা মুহূর্ত পার করা সেই জীবন। শেষ পর্যন্ত সেই শান্তির সন্ধান কি মেলে মেয়েটার জীবনে?
একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী লেখক। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায় কিন্তু পড়াশুনা, সংসার এবং কর্মজীবন বলা যায় যুক্তরাজ্যে। ম্যাথস এবং কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে অনার্স করেছেন কিংস কলেজ লন্ডন থেকে। পরবর্তীতে পাবলিক ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেন ইউনিভার্সিটি অববার্মিংহাম থেকে। দীর্ঘ ষোলো বছর ইংল্যান্ডের লোকাল গভর্ণমেন্টের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে চাকুরির পরবর্তমানে একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। আমিনার চাকুরীর বিষয়ডাটা এবং পরিসংখ্যান হলেও আগ্রহ হলো বাংলা সাহিত্য। অনলাইন সাহিত্য গ্ৰুপের মধ্য দিয়েই মূলত লেখালেখির শুরু ও প্রসার। স্বামী এবং দুই সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডের সারেতে তাঁর বর্তমান নিবাস।
♦ভূমিকাঃ জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকার হয়ে আসা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । বেশ কয়েকটি বই আছে আমার পাঠক জীবনে । যেগুলো পড়তে পড়তে আমি বারেবারে শুধু জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারের মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি । মনে হয়েছে এই অন্ধকারে পুরো পৃথিবীটাকে বিশাল মনে হয় । আমার অনুভূতিও যেন প্রকাশ সঠিক ভাবে না করায় অনেকটা বিশাল । তাই বিশাল অনুভূতি অন্ধকারে ছড়িয়ে যায় যেন পুরোটা জুড়ে । খোলা আকাশ, বাইরের বাতাস আর নিঃসঙ্গতা সব মিলিয়ে এই সময়টাকে খুব মায়ার মনে হয় । আর কে না জানে, মায়া বড়ই অবাধে চলাচল করা কিছু একটা । যা একবার আচ্ছন্ন করে দিলে আবেশিত হয়ে যেতে হয়ই, তাই বোধহয় এই সময়টা আমার ভালো লাগে খুব ।
♦পারিপার্শ্বিক দিকঃ আমার বই পড়া সেভাবে ভেবেচিন্তে না হলেও সামান্য একটু আয়োজন করে বই পড়াটা হয়ে যায়ই । কেনো যেন খুব সময় হিসেব করেও বই পড়া হয়ে যায় । রাতের অনুভূতি আমাকে সবসময়ই ঘিরে রাখে বলে, এই সময়গুলোতেই আমি বই পড়তে ভালোবাসি । তাই রাতের যখন মাঝামাঝি তখন বই পড়লে আকৃতিতে একটু বড়সড় বই পড়তেই আমার ভালো লাগে । কিন্তু তা ব্যস্ততায় হয়ে উঠে না । কিন্তু যে সময় আমি বই পড়ার জন্য মনস্থির করি, সেই সময়টিতে ওই বইটিই আমাকে সবকিছু ভুলিয়ে দেয়, সব । এই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম ঠিক রাত ২টায় । সামান্য ছোট হওয়া বইটি পড়তে আমার খুব একটা সময় লাগেনি । পড়ে ফেলেছিলাম বইটি । যখন বইটি পড়া শেষ হলো তখন সময়টা রাত ৪টা ২০ মিনিট ।
♦নামকরণঃ মানুষের মনে যখন দোটানা বেঁধে গিয়ে নিজের সাথে বিবেক এবং মনের এক টানাপোড়েন ঘটে, তখন তাকে বারবার অনুভূতিতে ভাসতে থাকা নিঃসঙ্গ মানুষ বলে মনে হয় যেন । পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু ব্যাপার কিংবা কোনো না কোনো মুহূর্ত থাকেই যেগুলো একেবারে নিজস্ব । একেবারে একান্তই নিজেকে আঁকড়ে ধরতে শেখার জন্যেই ঘিরে রাখা । নিজের জীবনে একটু সুখ পাওয়ার জন্য, একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস এর সময় যে বাতাসটা এসে লাগে সেটা পাওয়ার কত প্রচেষ্টা! এগুলো যেন বলে দেয় সবকিছু । পৃথিবীতে প্রতি পরতে পরতে কোনো মানুষের জীবন নিয়ে এগিয়ে চলা । এই নিয়েই জীবন । মায়া, সুখ, ভরসা, বিশ্বাস, শান্তি, ভালোবাসা এবং নিজের মন এবং বিবেকের সমান্তরালে টানাপোড়েনে নিজেকে ভালোবাসতে চাওয়া জীবনে, একটু খানি হঠাৎই মায়া বেরিয়ে আসতে চাওয়া আহারে জীবন!
♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ বারো বছরের মা মরা মেয়ে জুঁই । উচ্ছল, চঞ্চল মেয়েটা দাদা-দাদির কাছেই খুশিমনে বেড়ে উঠছিল । কিন্তু আকস্মিক এক ঘটনা ছোট্ট মেয়েটার জীবনটা তছনছ করে দেয় । ‘আহারে জীবন’ উপন্যাসটির শুরু জুঁইয়ের বারো বছর বয়সে ঘটে যাওয়া সেই দুঃখজনক ঘটনা দিয়ে । সেই ঘটনার প্রভাব জুঁইয়ের মনোজগৎ একেবারে তোলপাড় করে দেয় । তা থেকে জন্ম নেয় ভয়ংকর এক অভ্যাসের । জীবনের ছোটো বড় সব কষ্ট থেকে ক্ষণিক মুক্তি পেতে জুঁই নিজেই নিজেকে কেটে, ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে । জুঁইয়ের ভাষায়, ‘রক্তেই আমার মুক্তি, রক্তেই আমার স্বস্তি ।’ নিজের মনেই সারাটা জীবন যুদ্ধ করে করে যৌবনে পা রাখে জুঁই । মানসিকভাবে অসুস্থ এই জুঁইয়ের জীবনে প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ, কষ্ট, ভুল, যৌনতা, রক্তাক্ততা, শঠতা, প্রাচুর্য সবই আছে, শুধু নেই একটু মানসিক প্রশান্তি, শুধু নেই একটু স্বস্তি । মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসে জুঁইয়ের মনোজগতের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় ওর জীবন । অতীত এবং বর্তমানে দোদুল্যমান সেই জীবন । একটু স্বস্তি আর একটু শান্তির সন্ধানে প্রতিটা মুহূর্ত পার করা সেই জীবন । শেষ পর্যন্ত সেই শান্তির সন্ধান কি মেলে মেয়েটার জীবনে?
♦প্রচ্ছদঃ একা, নিঃসঙ্গ হয়ে পৃথিবীতে একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে জীবনকে কাটিয়ে দেয়া মুহূর্তগুলো যখন প্রচ্ছদে আসে তখন বিষয়টা আমার কাছে কেনো যেন খুব ভালো লাগার হয়ে যায় । এই প্রচ্ছদটা আমি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন খুব একটা আগ্রহী হইনি । কিন্তু মাঝে মাঝে ইদানিং ভাবলে মনে হতো, আমার আসলে আগ্রহী এবং ভীষণ পছন্দের একটি প্রচ্ছদ হওয়া এটি উচিত ছিল । যেভাবে খোলা আকাশের ঠিক নিচে একাকী, নিঃসঙ্গ একজন মেয়ে হয়ে কাটিয়ে দিয়ে নারী হওয়ার গল্প পুরো আকাশের সাথে থেকে থেকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তা বেশ অসাধারণ ।
♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ এই ধরনের উপন্যাসে আসলে চরিত্র বিশ্লেষণ করা খুবই কঠিন । উপন্যাসে তাই বেশ অনেকগুলো চরিত্র থাকলেও আমি সামান্য কয়েকটি নিয়ে বিশ্লেষণ করবো ।
•জুঁইঃ জুঁই নিভৃতে যতনে মনের মাঝেই নিজেকে পুরোপুরি সাজিয়ে রেখে দেয়া একজন নারী । যার জীবনে হঠাৎ করেই কোনো একটা পরিস্থিতি চলে আসে । সেই পরিস্থিতি তাকে পুরোটা এলোমেলো করে দেয় আত্মিক ভাবে । নিজেকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে । নিজের সাথে প্রচুর কথা বলা মেয়েটির সুখ-দুঃখ, দোষ-ভুল, হাসি-আনন্দ সবই যেন নিজের মন নামক পৃথিবীর সাথে । নিজেকে এভাবেই ভাসিয়ে দিতে গিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে থাকা মেয়েটির বয়ে চলে জীবন ।
•আহমেদঃ নিজের পেশার প্রতি ভীষণ উৎসাহী এবং পরিশ্রমী মানুষটির জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতি এসে পড়ে । কিছু কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে চলতে না পারার কিছু আবেগ তাকে ঘিরে ধরে রাখে । প্রতিটি সম্পর্ককে সম্মান করতে চাওয়ার একটা প্রবল ইচ্ছে থাকলেও ধৈর্যের সামান্য অভাব তাকে ঘিরে রাখে প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে ।
•আসিফঃ চুপচাপ হয়ে থাকা ছেলেটি সবার সাথে সহজে মানিয়ে চলতে না পারলেও কোথাও একটা গিয়ে তারও একটা নিঃসঙ্গ পৃথিবী আছে । যে নিঃসঙ্গ পৃথিবীতে শুধু অনুভব এবং মিষ্টি করে হেসে দিয়েই সে যেন তার স্বভাবের সহজাত আকর্ষণে নিজেকে মেলে ধরে । পরিবারের একটা অভাব তাকে আরো খানিকটা চুপচাপ স্বভাবের করে দেয় ।
টুকিটাকিঃ এছাড়াও আরো কিছু চরিত্র আছে উপন্যাসে । যারা উপন্যাসে ঘটনার ঘনঘটায় উঠে এসেছে । উপন্যাসে আছে হেইলি নামক একটি চরিত্র, যিনি নিজের পেশার প্রতি পুরোপুরি নিয়োজিত । বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের মিষ্টি একজন মানুষ তিনি । এছাড়াও উপন্যাসে আছে মনীষা নামের হাসিখুশি, বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের একজন নারী । যার সঙ্গ সবাইকে আনন্দ দেয় । উপন্যাসে চলে আসে হান্নান নামের একটি চরিত্র, যে কোনো দোষ বা ভুল করতে বাধ্য হলে তা স্বীকার করে নেওয়ার এক অদ্ভুত চেষ্টা আছে তার মাঝে । উপন্যাসে আছে মারুফ নামের এক রহস্যময় চরিত্র । যার স্বভাবে কিছুটা রহস্যের ঘনঘটা তাকে উপন্যাসে রেখে দেয় ।
♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √এই উপন্যাসটি যখন আমি কিনেছিলাম আমি তখনও সেভাবে বইটি কি নিয়ে, কি রকম হতে পারে সেভাবে ভেবে দেখিনি । হঠাৎ মনে হয়েছিল এই বইটা আমার খুব প্রয়োজন । আমার বই পড়ার শেষের যে মুহূর্তটা, সেটা এই বই পড়ার শেষের মুহূর্ত হয়েও সাক্ষী হতে চায় । তারপরই বইটি নিয়ে ফেলেছিলাম । আজকে সেই ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে মনে হচ্ছে, আমি সফল । সহজেই কোনো উপন্যাস ভালো না লাগতে চাওয়া আমি পাঠক হিসেবে খুবই আনন্দিত, এবং খুশি ।
√এই উপন্যাসের পটভূমি এর আগেই বলবো উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ এবং জীবনধারা যেভাবে বয়ে গিয়েছে, তা একই সুরে একই ধাঁচে বর্ণনা করার ব্যাপারটির জন্য । এই বিষয়টা দারুণ একটা ব্যাপার ছিল আমার জন্য । আমি পুরোটা উপন্যাসে খেয়াল করেছি যেন, প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ একই সুরে একই সুতায় করে বয়ে নিয়ে চলেছে প্রতিটি দৃশ্যপট । একই সঙ্গে জুঁই এর জীবনের ঘটে যাওয়া অতীতের প্রতিটি বিষয় নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক আবহ কিংবা ভবিষ্যতে উপন্যাসের ছক একই সমান্তরালে নিয়ে আসার জন্য যেভাবে উপন্যাসটি সাজানো হয়েছে তা বেশ অসাধারণ ছিল । সাথে এই ধরনের উপন্যাসে আবহ পরিবর্তন এবং তার সাথে সাথে বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এর পরিবর্তন বেশ ভালো ছিল । মনস্তাত্ত্বিক এবং বিবেকের সমান্তরালে প্রতিটি ঘটনার টানাপোড়েন এর সাথে নিজেকে ঘিরে রাখা দুঃখ, কষ্ট, দোষ-গুণকে একই সাথে বয়ে গিয়েছে পুরোটা উপন্যাস জুড়ে । উপন্যাসের আরো একটা ভালো দিক যেটি, সেটি হলো মনস্তাত্ত্বিক আবহ থাকায় একটি দৃশ্যপট নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে অনুভূতি প্রকাশ কিংবা তা ভাবা হয়ে গেলে তা সাময়িক ভাবে শেষ হয়ে গেলে বর্তমান সময়ের আবেশ যেভাবে দেখানো হয়েছে তা বেশ অসাধারণ ছিল । তাছাড়া মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এরপরে পরবর্তীতে সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য আরেকটি দৃশ্যপট চলে এসে পড়ে যেন । আবার কখনও গিয়ে পূর্বের দৃশ্যপট যেন চলে আসে । মনের যেভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি নেই, সেভাবেই আবেগ কিংবা আবহ সৃষ্টি এরও ব্যাপার নেই । সাধারণত এই ধরনের পটভূমিতে তখন আবহ, একই দৃশ্যপটে ঘটনার ঘনঘটার আবেগ এবং কথার সুর একই দরকার থাকে অথবা টানাপোড়েনে একটা সমান্তরাল আবেশ চলে এসে পড়ে । তা যেন অদ্ভুত সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে ।
√উপন্যাসের চরিত্র গঠন এবং তার উপস্থিতি এই ধরনের উপন্যাসগুলোর জন্য খুবই কঠিন হয় । এবং স্বল্প ভাবে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ হয় তাদেরকে সাজানোর জন্য । এই উপন্যাসে যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস সাথে আবার চরিত্রগুলো এসেছে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সেজন্য চরিত্রগুলো যে ঘটনার অববাহিকায় বিশেষত হয়ে এসে পড়েছে সেই ঘটনার দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে গঠন করে তার উপস্থিতি প্রকাশ করে সে অনুযায়ী আবহ এবং পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টি বেশ ভালো ছিল । এছাড়া এই ধরনের উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্রটির গঠনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ থাকে । যা বেশ ভালো ভাবেই তৈরি করা হয়েছে ।
♦প্রিয় অংশঃ মনস্তাত্ত্বিক এর ছিটেফোঁটা থাকা উপন্যাসগুলোকে আমার কেনো যেনো খুব প্রিয় মনে হয় । মনে হয় যেন কোথাও গিয়ে পৃথিবীতে নিজেকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার অদ্ভুত এক প্রয়াস এটি । তাছাড়া এই ধরনের উপন্যাসে বিভিন্ন ধরনের অন্যরকমের ধাঁচ বেরিয়ে আসে । একেক রকম দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিজের সাথে নিজের এক অদ্ভুত টানাপোড়েন চলে । যা পাঠক হিসেবে পেয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ মনে হয় খুব । মনস্তাত্ত্বিক আবহ যেভাবে শুরু হয়ে উপন্যাসের মাধ্যমে প্রথম প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারটি তা বেশ অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যাহোক এই উপন্যাসের সবথেকে যা প্রিয় আমার কাছে তা হলো, প্রথমত উপন্যাসটি মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠতে থাকলেও উপন্যাসের দৃশ্যপট বারবার পরিবর্তন এবং ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমান্তরাল ভাবে উত্তম পুরুষে গল্পটিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যা বেশ প্রিয় লেগেছে আমার । এছাড়াও সামাজিক কিছু সম্পর্কের টানাপোড়েন, কিছু মূল্যবোধ উপন্যাসে এসেছে যা বেশ উপন্যাসকে জড়িয়ে রাখে । উপন্যাসের আরেকটি প্রিয় ব্যাপার হলো, এই ধরনের উপন্যাসে কাহিনীর মাঝে একটু গভীরতা রাখার পাশাপাশি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো করে বিপরীত দিকে একটু ধোঁয়াশার আবেশ সৃষ্টি করা । যা অসাধারণ ভাবে এসেছে । মানসিকতা, টানাপোড়েন, কষ্ট, দোষ এবং দৃশ্যপটে একান্ত নিজস্ব করে অনুভূতি প্রকাশের স্বার্থে গানের জায়গা ছিল কিছু কিছু জায়গায় । যা বেশ ভালো ছিল ।
♦অন্যান্য বিষয়ঃ
√প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ ধীরে ধীরে আমার প্রিয় থেকে প্রিয় প্রকাশনী হয়ে যাচ্ছে যেন । প্রিয় এবং বেশ ভালো ভালো কিছু উপন্যাস তারা উপহার দিচ্ছে আমাদের । যাহোক সবসময়ের মতো এই বইটির বাঁধাই বেশ ভালো ছিল । পড়ার সময়ে যে জন্য সেভাবে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি । এছাড়া বইটির প্রচ্ছদ বেশ সুন্দর এবং দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । প্রচ্ছদটিকে দেখলেই বইটিকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে খুব । তাছাড়া সেভাবে টাইপিং মিস্টেক নেই যে কারণে বইটি পড়তে সমস্যা হয়নি ।
♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘আহারে জীবন’ বইটি লেখক আমিনা তাবাসসুম এর দ্বিতীয় বই । যে বইটি আমার পড়া হিসেবে তার প্রথম বই । এছাড়া তার লেখার প্রতি আমার সেভাবে ধারণা নেই । এটা একজন পাঠকের কাছে কি যে ভালো লাগার এবং বিশেষ একটা মুহূর্ত তা আসলে প্রকাশ করার মতো নয় । একজন পাঠক যত নতুন ধরনের গল্পে, নতুন ঘটনা কিংবা পটভূমি নিজের মনে নিয়ে জড়ো করতে থাকে তত যেন আনন্দে ভাসে । এই নিজেকে আরো নতুন নতুন করে বিভিন্ন কাহিনীর সাথে আবিষ্কার করার ব্যাপারটিতে বেশ লাগে । সেজন্য নতুন লেখক এবং নতুন কোনো ধরনের লেখা পড়ার শুরুটা বেশ উত্তেজিত একটা ভাব এনে দেয় । সেক্ষেত্রে লেখকের জন্য সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণও হয় কাহিনীতে অন্যরকম কিছু এনে, উপন্যাসের ঘরানায় পাঠককে মোহে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারটায় । আমার ক্ষেত্রে বলবো, লেখক আমিনা তাবাসসুম এই ব্যাপারে সফল । এই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস, তার সাথে সাথে কাহিনী এবং দৃশ্যপটে পরিবর্তন এবং কাহিনীতে গভীরতা থাকার একটা চেষ্টা অদ্ভুত ভালো লাগা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া লেখকের লিখনশৈলী বেশ সুন্দর । যেভাবে লেখক গল্পে প্রতিটি ঘটনার মোড়, আপেক্ষিকতা এবং দৃশ্যপটে সুর এবং ধাঁচ রেখেছেন তা বেশ সুন্দর ছিল । এছাড়াও শব্দপ্রয়োগ এবং তা দিয়ে তৈরি বাক্যালাপে বেশ ঝরঝরে একটা ভাব আছে । যা নিঃসঙ্গ হয়ে থাকা সামান্য কষ্টের আবহ উপন্যাসে এনে দিলেও পড়তে থাকার সময়ে কোনো তেমন সময় লাগায় না । লেখক আমিনা তাবাসসুম এর এই ধরনের লিখনশৈলী আরো সুন্দর হোক । আরো নতুন নতুন পটভূমিতে তার লেখার মাধুর্য বেড়ে উঠুক । তার জন্য শুভকামনা রইলো ।
♦রেটিংঃ ৪.৭/৫
♦উপসংহারঃ কোনো বই যখন পড়া শেষ হয়ে গেলে আমি বইয়ের শোকেসে রেখে দেই । তখন মনে হয় অবশেষে বইটি নিজের পাকাপোক্ত জায়গায় নিজের জন্য আবাস গড়ে নিতে পারলো । ওটাই এই বইটির জন্য একান্ত নিজের করে পাওয়া । তখন মনে হয় হয়তো এই বইটিকে আর সেভাবে খেয়াল করা হবে না । কিন্তু কোনো এক নিঃসঙ্গ চুপিচুপি রাতে, কিংবা উদাসী দুপুরে হয়তো মেঘলা বিকেলে বইটির দিকে দূর থেকে তাকালে মনে পড়বে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়ার কথা, আবেগতাড়িত হওয়ার কথা । কিন্তু আমার একেবারেই যে না পড়া বইয়ের জায়গা মনের ভিতরে এবং বাইরে, সেখানে আর এ বইটি রাখা হবে না । কিন্তু মনের ভিতরে বইটি জায়গা বর্তমানে দারুণ ভাবে পেয়ে গিয়েছে নিজের নিজস্বতা এবং অনুভূতি দিয়ে ।
Read More
Was this review helpful to you?
By Dr. Moulee Akhund,
03 May 2022
Verified Purchase
#বুক_রিভিউ_আহারে_জীবন কাহিনী সংক্ষেপঃ বারো বছরের মা মরা মেয়ে জুঁই। উচ্ছল, চঞ্চল মেয়েটা দাদা দাদির কাছেই বেড়ে উঠছিল খুশিমনে। কিন্তু আকস্মিক এক দুর্ঘটনা তছনছ করে দেয় ছোট্ট মেয়েটার জীবন। “আহারে জীবন” উপন্যাসটির শুরু জুঁইয়ের বারো বছর বয়সে ঘটে যাওয়া সেই দুঃখজনক ঘটনা দিয়ে। সেই ঘটনার প্রভাব জুঁইয়ের মনোজগত একেবারে তোলপাড় করে দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর এক অভ্যাসের। জীবনের ছোট বড় সব কষ্ট থেকে ক্ষণিক মুক্তি পেতে জুঁই নিজেই নিজেকে কেটে, ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। জুঁইয়ের ভাষায়, “রক্তেই আমার মুক্তি, রক্তেই আমার স্বস্তি।“ নিজের মনেই সারাটা জীবন যুদ্ধ করে করে যৌবনে পা রাখে জুঁই। মানসিকভাবে অসুস্থ এই জুঁইয়ের জীবনে প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট, ভুল, যৌনতা, রক্তাক্ততা, শঠতা, প্রাচুর্য সবই আছে, শুধু নেই একটু মানসিক প্রশান্তি, শুধু নেই একটু স্বস্তি। মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসে জুঁইয়ের মনোজগতের ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় ওর জীবন। অতীত এবং বর্তমানে দোদুল্যমান সেই জীবন। একটু স্বস্তি আর একটু শান্তির সন্ধানে প্রতিটা মুহূর্ত পার করা সেই জীবন। শেষ পর্যন্ত সেই শান্তির সন্ধান কি মেলে মেয়েটার জীবনে?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আমিনা তাবাসসুম মনস্তাত্ত্বিক গল্প লিখতে সিদ্ধহস্ত। মানুষের মন পড়ে ফেলার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার। সেই সাথে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি ও ভাষার দখল তার রচনার অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রথম বই “মাতৃত্ব” পড়েই তার ভক্ত হয়ে উঠেছিলাম, সেই মুগ্ধতার রেশ কাটেনি “আহারে জীবন”এও। একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের বয়ানে জীবনটাকে দেখা ও বর্ণনা করা নিতান্ত সহজ কর্ম নয়। এই নিদারুণ কঠিন কাজটিই আমিনা তাবাসসুম করে ফেলেছেন অসামান্য পারদর্শিতায়। তার এই রচনায় উঠে এসেছে শৈশবের গভীর ক্ষত মানুষের পরবর্তী জীবনে কি ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করতে পারে, উঠে এসেছে শিশুদের ওপরে ঘটে চলা যৌন নির্যাতনের সম্ভাব্য ফলাফলও। মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাস যতটা না একটি ভালো সাহিত্য উপভোগের আনন্দ দেবে, ঠিক ততটাই পাঠককে করে তুলবে সচেতন। পাঠক সচেতন হবে চারপাশের মানুষগুলোর মানসিক অবস্থা বুঝতে আরেকটু সদয় হতে, অভিভাবকরাও সচেতন হবেন তাদের সন্তানদের প্রিয়জনের রূপ ধরে আসা ছদ্মবেশী হায়েনাদের কবল থেকে রক্ষা করতে। বইয়ের সাথে মানানসই প্রচ্ছদ পাঠকদের দেবে বাড়তি পাওয়া। কোনো বানান ভুল কিংবা বাক্য গঠনগত ভুল বইয়ে ছিল না। সব মিলিয়ে 'আহারে জীবন' আমার এবারের বইমেলায় কেনা বইগুলোর মধ্যে সেরা দশ বইয়ের মধ্যে অন্যতম। এত সুন্দর একটি বই আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য লেখকের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও এরকম আরো অনেক সচেতনতামূলক সাহিত্য রচনার বিনীত অনুরোধ রইল
I got the book last week and saved it for the weekend. And What a perfect weekend read! Finished it in two hours and that really explains how much I loved it. Loved the plot and specially the writer’s ability of telling the story. She opened up the inside of a person who might often be judged for her actions but there’s always more to it. Can’t wait to read more from the writer.