প্রাচীন কথাগুলোকে নতুন করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবো এই ভেবে আমার যাত্রা। দেশ থেকে দেশের অতীত এবং দূরদেশে থেকে নিজ দেশের অতীত ভিন্ন ভাষায় পড়ার পর যেটা দাঁড়ায়? একটা বিরাট ব্যবধান, এজন্যে মনে হবে কিছুতো নতুন আছে। কারণ, নিজের দেশকে জানতে হলে বিদেশি প-িতের মারফতে জানতে হচ্ছে। লেখাপড়া অনেক উন্নত হয়েছে, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচ- উন্নতি লাভ করেছে। ছেলে মেয়েরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে গবেষণার পথ অনেক কম বয়সে জানতে পারছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাবার সুবাদে উচ্চ শিক্ষার বাধা কমে গেছে। বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করার প্রয়োজন তেমন থাকবে না, সেদিন খুব কাছে। উচ্চ শিক্ষাতো পড়ানো হতো এই দেশে আমাদের বাংলাদেশে, অনেক আগে থেকে। মাটি খুঁড়লে সে সুগন্ধ এখনো বেরোয়। প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে অনেক পড়াশুনা, গবেষণার অভাব রয়ে গেছে বাংলাদেশে। এটার একটা কারণ হলো ‘স্কুলের সিলেবাস’? কৈশোর থেকে যদি উপমহাদেশের ইতিহাস জানতে না পারে, বড় হলে আগ্রহ বা সময় দুটোই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিছু ইউরোপ, কিছু আরব, কিছু উপমহাদেশ-এর ইতিহাস যেমন: ফরাসি বিপ্লব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেউশান, প্রাচীন ভারতের সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা কিভাবে হলো। প্রাচীন ভারতে গ্রিকদের শাসন ও শিল্পতে অবদান। মুগল, আরব, তুর্কি শাসকদের শাসন এবং সামাজিক পরিবর্তন। ইংরেজ শাসন, জমিদার বা সামন্ত শ্রেণি ও শাসন প্রণালী। এইসব ইতিহাস ‘ব্লেন্ড’ করে ছাত্রদের জানা দরকার আছে। তাহলে বছরে অন্তত দশজন প্রজ্ঞাবান ইতিহাসবিদ বের হবেন। জানবার দরকার আছে সবার। এই জানাটা অনেকটা অধিকারের ক্ষেত্রে পরে। যেমন প্রাচীন কৃষি, শ্রম, সমাজ ব্যবস্থা, বনজ সম্পদ-সংরক্ষণ, পশু পালন। পার্বন, জাত শিল্পগোষ্ঠী; এই গুলি এখন ‘বিজনেস’ ক্লাশে পড়াবার সময় চলে এসেছে। প্রাচীন বাংলার সাহিত্য, শিল্প এগুলো আমি জানলাম অনেক দেরিতে। যদি এলিমেন্টারি ক্লাশে থাকতো, তাহলে আগ্রহ অনেক আগে জন্ম নিত। ফ্রান্স, ইতালিতে অনেক রাজপ্রাসাদ, সৌধ, সেতু দুর্গ এখনো ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে প্রতিদিন আগ্রহভরা জ্ঞানপিপাসু দর্শকদেরকে অতীতের সভ্যতার কথা জানান দেয়। সেগুলো বাংলাদেশের সভ্যতা ধ্বংসের অনেক আগের। স্পেনে মুসলিমদের গড়া এবং আগের সকল ইমারত, চার্চ, মিউজিয়াম, বিভিন্ন ঐতিহাসিক সম্পদ এখন সরকারিভাবে ট্যুরিজমের বিরাট আয়ের উৎস এবং পর্যটন ও ইতিহাসের অংশ। সব কিছু তাঁর সযতেœ রেখেছেন। সেগুলোও নালান্দা ধ্বংস হবার আগের, অনেক পুরোনো। শুধু দুঃখ আমাদের ইতিহাস সংরক্ষণ যেন অপরাধ। এ কারণটা আমাকে দুঃখের আবেগে বেশ স্পর্শ করেছে, যখন আমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছিলাম। এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সেখানকার অভিজ্ঞতার ভিত। এবার বিদেশ ফেলে নিজ দেশের প্রাচীন সভ্যতা জানবার সামান্য প্রয়াস। আমাদের প্রাচীন সাহিত্য, শিক্ষা থেকে নিয়ে বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মত উন্নত এবং আধুনিক বিষয়ের প্রয়োগ ছিল তখনকার সা¤্রাজ্যে বা মহাজনপদে। জ্ঞানভা-ারের বিভিন্ন শাখা শিক্ষা ও শেখানো হতো। গণতন্ত্রের মত আধুনিক রাজনৈতিক সুব্যবস্থার কথা ভাবতে অবাক হতে হয়, তখন হয়ে আসছিল। কিন্তু মাঝপথে এসে হারালাম। এই হারানো! কি যন্ত্রণা দেবে না? কোন জ্ঞানপিপাসু পাঠককে। তাহলে চলুন, বইয়ের ভেতরে যাই।