চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৬-৬৪৬ খ্রিঃ যখন ভারতবর্ষে ভ্রমন করেন তখন দক্ষিনের এই সমৃদ্ধিশালী জনপদ ‘বাকলা’র পশ্চিমভাগে উত্তালতরঙ্গময়ী সুগন্ধা নদী প্রবাহিত ছিল। এই নদীর একতীরে পোনাবালিয়া গ্রামের শ্যামরাইলে শিবলিঙ্গ এবং অন্যতীরে শিকারপুরের উগ্রতারাদেবী স্থাপিত ছিল। এ ঐতিহাসিক সত্য অনুযায়ী ঝালকাঠির বৃহদাংশ ভূখন্ড সুগন্ধা নদীর দান। সুগন্ধা বিষখালী গাবখান ধানসিঁড়ি বাসন্ডা কালিজিরা জাঙ্গালীয়া নদীর জল অঙ্গে নিয়ে দুই তীরে গড়ে ওঠা লোকজীবনের কৃষ্টি কালচার ধর্ম আচার অনুষ্ঠানে মিশে আছে ঝালকাঠির সংস্কৃতি। নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা, জীবন ঘনিষ্ট নাটক, পালাগান, পূঁথি, জারি-সারি, যাত্রা, কবিতা, সাহিত্যে কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাতি অর্জন করে। ১৮৭৫ সালে ঝালকাঠি পৌরসভা গঠনের মধ্য দিয়ে এর নগরায়নের যাত্রা শুরু। ৪টি থানা (উপজেলা), ৩২ টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝালকাঠি জেলা ঘোষিত হয় ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী। এ জেলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস গর্বের ও গৌরবের। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে আর্šÍজাতিক অঙ্গনেও খ্যাতিমান বাসন্ডা’র জমিদার চন্ডিচরণ সেন (১৮৪৫-১৯০৬) সর্বপ্রথম বাংলায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেন। তার কন্যা কবি কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩) সে যুগের অবিভক্ত বাংলার প্রথম মহিলা গ্রাজুয়েট ও শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি। কবি কামিনী রায়ের কবিতা--পরের কারনে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন-মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে/আপনার কথা ভুলিয়া যাও-জনসাধারনের হৃদয়ে হৃদয়ে মুদ্রিত। ধানসিঁড়ি নদীর স্মৃতিধন্য আধুনিক বাংলা কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালি কবি জীবনানন্দ দাশ। ধানসিঁড়ি নদী, নদীর তীরের অপরুপ প্রকৃতি, নানা প্রজাতির গাছ, পাখির রূপের গভীরে জীবনানন্দের অর্ন্তদৃষ্টি। “হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে। তাই কবির ইচ্ছা-- আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ি টির তীরে এই বাংলায়। -রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নদীর আধুনিক রূপকার। ধানসিঁড়ি আর ঝালকাঠি ধন্য জীবনানন্দকে বুকে ধারন করে।