চার দশক আগে কজন তরুণ লেখকের উদ্যোগ আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই আন্দোলনের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা এবং উত্তরকালে তার ধারাবাহিকতা অনুসরণের কৌতূহল নিয়ে বর্তমান সংকলনটি প্রকাশের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে শিল্প-সাহিত্যে নিবেদিত একদল তরুণের স্ফূর্তি ও আবেগের স্মৃতি নথিবদ্ধ করার প্রচেষ্টা যেমন আছে, তেমনি আছে স্বৈরশাসনের কালবেলায় প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের অনুভূতি-সঞ্জাত একটি পত্রিকা প্রকাশের অভিজ্ঞতার খানিকটা তুলে আনার প্রয়াসও। ‘বিপক্ষে’ নামে আশির দশকের একটি সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিনের আটটি সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছিল। বাংলাদেশে সাহিত্যের একটি হারিয়ে যাওয়া অধ্যায়ের সঙ্গে একালের পাঠকদের পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়াই সংকলনটির প্রাক-লক্ষ্য। সময়ের বিপক্ষে যাওয়া এক কঠিনতর কাজ। অক্ষরের বিন্যাসে নিজেদের অস্তিত্বকে যদি কিছু বলে হাঁটার মতো একটা পথ পাওয়া যায়। পিছিয়ে পড়া সমাজকে, যে সমাজ নিজ ভাষার কোন অক্ষরে মাত্রা আছে এবং নেই, তাই ঠিকমতো জানে না, সাহিত্য দিয়ে তাকে (সমাজ) কতটুকু নাড়া দেওয়া যাবে? চেষ্টা করতে দোষ কী? পাঠকগণ যদি ‘বিপক্ষে’ পড়েন, যদি নতুন কোনো আরশি খুঁজে পান, নিজেদের বোঝার ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করেন, তাই হবে অর্ঘ্যতুল্য অর্জন।
আহমদ বশীরের প্রথম গল্পগ্রন্থ অন্য পটভূমি প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে, যা হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল ১৯৮২-তে। তারপর আরো দুটো ছোটগল্প সংকলন প্রকাশিত হলেও লেখক কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সাহিত্যজগৎ তেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে যান। হঠাৎ মৌনতা ভেঙে, কোনো এক মহাশক্তির কল্যাণে, আবার লেখালেখি শুরু করেছেন। রাহুচক্রের আহ্বানে আবার যদি কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যান এই লেখক, কারও বুঝি কিছু বলার থাকবে না সেই দিন।