নাসরীন জাহান কবিতা লেখেন। কেউ কেউ হয়তাে অবাক হচ্ছেন। কিন্তু তারা এটা জানেন না যে, সাহিত্যচর্চার শুরুতে তিনি কবিতা ও ছড়াই লিখতেন। পরে ঝুঁকে পড়েন কথাসাহিত্যে। তাঁর প্রথম গদ্যের বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। আর ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। অবশ্য নাসরীন জাহানের পাঠকমাত্রই তাঁর কবিতার সঙ্গে সুপরিচিত। তার গল্প-উপন্যাসে মাঝে মাঝেই উঁকি দেয় কবিতা, বিভিন্ন বাক্যও কবিতার মতাে। যেমন- সম্পর্ক শুকিয়ে গেলে জলে কী হয়? শরীর শরীর পান করছে, এমন অজস্র আনুভূতিক পঙক্তি । এ বইয়ের কবিতা জুড়ে আছে প্রচুর বৃষ্টি-পাখির উড়াল আর সমুদ্রের উচ্ছাস। সমুদ্র যেন এক খুলে থাকা ঝড়। বহুমাত্রিক বিষয় নিয়ে কবিতার শিরা ধরে হেঁটেছেন তিনি। উপমা প্রয়ােগেও অভিনবত্ব লক্ষ্যনীয়। আর নাসরীনের যে প্রিয় বিষয়- মনস্তত্ত্ব কথাসাহিত্যের মতাে এখানেও মানব মনের আলাে-ছায়া অপূর্ব ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। দেখা যায় জাদুবাস্তবতার প্রতিফলন। পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়ও এই কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে। এই গ্রন্থ কবিতাপ্রেমীদের পাশাপাশি নাসরীনের কথাসাহিত্যের পাঠকদেরও আকৃষ্ট করবে। এতে কোনাে সন্দেহ নেই।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।