অবসর গ্রহণের পর গ্রামে ফিরে যাওয়া একজন সচিবের বাড়ি আর নায়িকা উইলিমাদের বাড়ি পাশাপাশি। সচিব সাহেবের একমাত্র মেধাবী ছেলে (মোস্তফা মেহেদী) ও উইলিমা একই বছরে এসএসসি পাস করে আর একই কলেজে ভর্তি হয়। আসতে যেতেই পরিচয়। উইলিমার পরিবার গরিব হওয়ায় একসময় থেকে মোস্তফা মেহেদীই তার লেখাপড়ার ভার নেয়। সেই সাথে নাচ ও গান শিক্ষার ভারও। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও মোস্তফা মেহেদীই এখানাকার তার যাবতীয় খরচও কলেজজীবনের মতোই বহন করতে থাকে। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে এসে ঘটনাক্রমে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গান ও নৃত্য পরিবেশেনের চান্স পেয়ে যায় উইলিমা। পরিচিতি বাড়া শুরু তার এখান থেকেই। সুন্দরী হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তার নায়িকা হওয়ার শখ; কিন্তু মোস্তফা মেহেদী তার সেই পথে বড় বাধা। ভার্সিটিতে ভর্তির পরই তাদের দুজনের বিয়ে হয়। ইতিমধ্যে উইলিমা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিটিভিতে জাঁকজমকপূর্ণ একটি বিরাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশময় ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে তার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সুযোগ একেবারেই হাতের নাগালে চলে আসে। শিক্ষা শেষে একসময় উভয়ে চাকরিও পায়; কিন্তু দুজন দুই প্রতিষ্ঠানে। এই সুযোগটিকে সদ্ব্যবহার করে শুরু হয় বিটিভিতে নাটক, তারপর চিত্রজগতে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ। সংসারজীবনে তাদের একটামাত্র সন্তান, যার বয়স যখন ছয় মাস ঠিক সেই সময় তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু কেউ কাউকে তালাক দেয় না। সারা জীবন তাদের কেউই আর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে না, যদিও উইলিমা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে মোস্তফা মেহেদীর সংসারে ফিরে যাওয়ার; কিন্তু জীবিত অবস্থায় তা আর কোনো দিনই সম্ভব হয়নি। চিত্রজগৎ থেকে অবসর গ্রহণের পর নানাবিধ দুরারোগ্য অসুখে একসময় তাকে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা নিতে যেতে হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতালে করা অসিয়ত অনুসারে কর্তৃপক্ষ উইলিমাকে মোস্তফা মেহেদীর বাসায় পৌঁছে দেয়। জীবিত অবস্থায় শতচেষ্টা করেও স্বামী মোস্তফা মেহেদীর ঘরে ঠাঁই না পেলেও, শুধু অসিয়তের কারণে মৃত অবস্থায় ঠিকই তার সেখানে ঠাঁই হলো। পুনশ্চ স্ত্রী হিসেবে উইলিমাকে গ্রহণের ক্ষেত্রে যে মনটা ইস্পাত কঠিন ছিল, নায়িকা হওয়ার কারণে দূরে ঠেলে রাখা স্ত্রীর মৃতুতে তার সেই মনটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল ফুলের মতো কোমল। মূল গ্রন্থে সবিস্তারিত।