জীবনটা আসলে মোহ ও মায়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে মস্ত এক যাপন চিন্তা। সে চিন্তায় মন রেখে জীবনের আয়নায় সময়ের সমষ্টি বিম্বিত হয় ঠিকই কিন্তু সেটা প্রকৃতই ছিন্ন-খণ্ড কিছু স্মৃতি আর দিনযাপনের ধূলিচিহ্ন রেখে চলে প্রতিনিয়ত। তাই বলা যায়, শুধু যাপিত সময়ের সমষ্টির নামই জীবন নয় বরং রেখে যাওয়া ধূলির মতো ধূসর-ছিন্ন আশ্চর্য সব মায়া মিলেই মানুষের জীবনসমগ্র। মায়ার সে চিত্র কখনো হয়ে ওঠে প্রবল আকর্ষণ ও ভালোবাসার, কখনো দ্বন্দ্ব ও দ্বিধামুখর আবার কখনো-বা আশ্চর্য করুণ কোনো টানাপড়েনের। নানা বর্ণের বহুকৌণিক এসব মায়ার দাবি জীবনের কাছে শুধু দায়হীন হয়ে টিকে থাকে না-দারুণ কৌতূহল নিয়ে হাজির হয়; কখনো জিজ্ঞাসা করে, আবার জীবনকে ক্ষতবিক্ষতও করে। মানুষের ভেতরে মন্থিত মায়ার এরূপ নীরব, সঙ্গত ও সত্য দায়বোধের এক ভাষিক কারুকাজ ‘নোনা মাটি ধূলিফুল’। উপন্যাসের মূল চরিত্র বিপত্মীক ফণীচাঁদ ও তার কিশোরপুত্র নন্দকে ঘিরে প্রবল জীবন সংহতি যেমন দেখা যায় পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষে আবার তা হয়ে ওঠে জটিল ও ক্লেদময়। সুলেখা নিজের জীবন খুঁড়ে আশা জাগাতে গিয়ে আটকে যায় ভিন্ন এক মোহ ও মায়ার অবিচ্ছিন্ন শিকলে। কিন্তু তারা কেউ মায়ার দায় থেকে বাঁচতে পারে না। আপন ধূলিমাটির স্মৃতি-গন্ধ-পরশ থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিলেও জীবন থেকে ঠিক পালাতে পারে না। সম্পর্কগুলো অনিবার্য ভাঙনের মুখে পড়েও শেষমেশ আস্থা ও ভরসার মিলনবিন্দুতে উপনীত হয়ে টিকে থাকে অচেনা স্থানান্তরে। চিরচেনা সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে জীবনের অলৌকিকতা প্রকাশ পায় সেখানেই-অলীক কোনো গন্তব্যে।
মঈনুল হাসান ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৪ঠা আগস্ট (বাংলা ২০ শ্রাবণ), ঢাকায়। তবে পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলায়। বাবা মরহুম মাে. আব্দুল আউয়াল এবং মা বেগম শামসুন নাহার। নব্বই দশকের শুরুর দিকে কৈশাের পেরােনাে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে লেখালেখির সূচনা। তারপর দীর্ঘ বিরতি। বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে চাদপুরে কর্মরত। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘শিশু’ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিতভাবে ছড়া ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ফুলকুড়ানি মেয়ে (অমর একুশে বইমেলা ২০১৬-তে অনন্যা থেকে প্রকাশিত)।