বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতিটি সদস্য রেখেছেন অনন্য অবদান। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবের দুই সন্তান শেখ কামাল ও শেখ জামাল স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে লড়েছেন রণাঙ্গনে । স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্বে বঙ্গমাতার ভূমিকা নেপথ্যচারীর, কিন্তু দুঃসাহসী। ঝড়ের খেয়া তীরে নোঙর করিয়েছেন দক্ষতার সঙ্গে হাল ধরে । স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে স্বামী শত্রæ রাষ্ট্র পাকিস্তানের কারাগারে, দুই পুত্র রণাঙ্গনে । কিন্তু তিনি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, ধীরস্থির । শেখ হাসিনা ষাটের দশকের শেষার্ধে আইয়ুবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে । সুভাষ সিংহ রায় শিল্পীর নিপূণ তুলির টানে তুলে এনেছেন তাঁদেও কথা। আরও এসেছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা ও শিশু শেখ রাসেলের কথা। আমরা জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত উদ্যোগ ও আগ্রহে `Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation BANGABANDHU SHEIKH MUJIBUR RAHMAN’ এর ১৪ খন্ড প্রকাশিত হচ্ছে । এতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জানার পরিধি অনেক বেড়েছে। ২০০২ সালে পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী আহমদ সেলিম ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর নয় মাসের বন্দী জীবনের কথা লিখেছেন Sheikh Mujib’s Nine Months in Pakistani Prison Blood Beaten Track’ গ্রন্থে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে প্রথমে পাকিস্তানের করাচি, পরে অন্যান্য স্থানে বন্দী রাখে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবার ছিল ঢাকায় গৃহবন্দি। ১৭ ডিসেম্বর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন শেখ হাসিনা। হরিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৮ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনকে সিহালা রেস্টহাউসে আনা হয়। এই রেস্টহাউসে বঙ্গবন্ধু ছিলেন। সেখানে তাঁকে একটি রেডিও দেওয়া হয়েছিল। এই বেতার যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধু তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার শুনতে পান, গ্রেফতার হওয়ার পর পরিবারের কারও কণ্ঠ এই প্রথম শুনলেন । এভাবে তিনি জানেন পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন। তবে শেখ হাসিনার বক্তব্যে মুক্তিবাহিনীর সদস্য দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালের বিষয়ে কিছু ছিল না। জার্মান প্রবাসী লেখক সরাফ আহমেদের ‘১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড : প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন’ গ্রন্থে প্রাসঙ্গিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর পরিবার যে দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেছেন তার বিবরণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধেও সময়েও ভ’মিকাও তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের পেঙ্গুইন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নেহা দিভেদী The Untold Story of the Rescue of SHEIKH HASINA THE LONE WOLF গ্রন্থের নানা তথ্য আমাদের বঙ্গবন্ধু পরিবারের বন্দীজীবনের কথা জানার সহায়ক। সুভাষ সিংহ রায়ের এই গ্রন্থ নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরায় সহায়ক হবে, সন্দেহ নেই ।
সুভাষ সিংহ রায়, জন্ম ১৯৬৬ সালে, যশাের জেলায়, বিখ্যাত সিংহ রায় পরিবারে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাগ্মিতা তার রক্তে। পেশায় ওষুধ বিজ্ঞানী, প্রবলভাবে রাজনীতি করেন, একসময় তুখােড় ছাত্রনেতা ছিলেন। লিখতে শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই, কলামিস্ট হিসেবে নানা পত্রিকায়। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায় যে ক'জন নতুন ধারা সূচনা করেন সুভাষ অবশ্যই তাদের অন্যতম। সুভাষ আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, যিনি ইস্পাতকে ইস্পাতই বলেন। সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে খাপখােলা ধারালাে তলােয়ারের মতাে শাণিত শব্দাবলি, সত্য তবে বিদ্ধ করে হৃদয় নির্ভয় উক্তি তার, এজন্য তিনি লেখক হিসেবে একেবারেই অন্যরকম।