শিশুদের ছড়া কবিতা রচনায় ফররুখ আহমদের অবদান অবিস্মরণীয়। বিষয় বৈচিত্র্যে ও উৎকর্ষ বিচারে ফররুখ আহমদের শিশু-কিশোর সাহিত্য বলা যেতে পারে তুলনারহিত। ছড়া-কবিতার ভাব বা বিষয়, ভাষা, ছন্দ ও শিশু-মনস্তত্ত্ব বিচারে তাকে বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে অভিহিত করতেই হয়। তার ছড়া কবিতার গুণগত মান অন্য অনেকের থেকে আলাদা। ফররুখ আহমদ শিশুতোষ ছড়া-কবিতার ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ হয়ে ওঠেন কালের বিচারে। শিশুদের উপযোগী ভাব-ভাষা ও ছন্দ ব্যবহারে তার অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন তাকে বহুকাল স্মরণীয় রাখবে বলা চলে। লেখায় উপমা উৎপ্রেক্ষা ও ব্যাজস্তুতি ব্যবহারে ফররুখ ছিলেন খুবই পারঙ্গম। এসব অলংকারের প্রয়োগ তার লেখাকে করেছে প্রাণবন্ত ও শাণিত। তার বীর রস,শান্ত রস, প্রকৃতি বর্ণন ও সেই সাথে হাস্যরসের প্রয়োগ তাকে অন্যান্য লেখক থেকে পৃথক করেছে। এতক্ষণ যা বললাম তার সবই রয়েছে তার শিশু সাহিত্যে। আর বড়দের সাহিত্যে রয়েছে প্রতীকের চমৎকার ব্যবহার। তার বিখ্যাত পাঞ্জেরী কবিতায় এই ‘পাঞ্জেরী’এসেছে প্রতীক হিসেবে। সমুদ্র অভিযানকে স্বপ্নময় জীবনের অংশ ও নাবিককে অভিযাত্রী দলনেতা ও সাহসীকতার প্রতীক হিসেবে দেখেছেন কবি। শিশু সাহিত্যে অবশ্য প্রতীকের ব্যবহার কম। সব মিলিয়ে অনন্য ফররুখ তাই আরো দীর্ঘকাল প্রাসঙ্গিক থাকবেন সে কথা বলাই বাহুল্য।
ফররুখ আহমদের জন্ম -জুন ১০, ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার। ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী কবি। এই বাঙালি কবি 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তাঁর কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তাঁর কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। ১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক "প্রাইড অব পারফরমেন্স" এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাঁকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। তিনি অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪ সালে মৃত্যু বরণ করেন।