গল্পের অমিত শক্তি যা আমরা আলিফ লায়লাতে দেখি আর উপাদানের প্রাচুর্য যা প্রতিভা বসু তাঁর ‘গল্পের গল্প’তে দেখিয়েছেন, এই শক্তি আর উপকরণের দারুণ মেলবন্ধন মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে ঘটিয়ে আসছেন মহাপুরুষগণ। সহস্রাব্দ ধরে প্রেরিত পুরুষ, সুফি, সাধু-সন্তগণ তাদের শিষ্যদের ছোট ছোট রূপকধর্মী গল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে আসছেন। যেমন, মহামতি যিশুর Parable-গুলো। আরো পিছনে সময়-ভ্রমণ করলে আমরা পাই ঈশপের চির নুতন, লোকপ্রিয় Fables বা নীতিগল্পসমূহের। যিশু তাঁর রূপকগল্পগুলোতে প্রায়ই উটের প্রসঙ্গ এনেছেন। আর অন্যদিকে ঈশপ তার গল্পে ব্যবহার করেছেন হরেক রকমের পশুপাখি। সংস্কৃত সাহিত্যের চিরায়ত সম্পদ পঞ্চতন্ত্র এবং হিতোপদেশেও আমরা গল্পের চরিত্র হিসেবে পশুপাখির ব্যবহার দেখি। সুফি, দরবেশ, পীর আউলিয়াগণও তাদের শিষ্যদের আধ্যাত্নিক শক্তিতে বলীয়ান করতে অনেকটা প্রাগুক্ত মহাত্মাগণের অনুসৃত কৌশল অবলম্বন করেন। সুফি দরবেশদের কিছু গল্পতো নামোল্লেখ না করলে মনে হবে রীতিমত ঈশপের গল্প! এ যেন সুফিদের কথা আর ঈশপের সুরের মিথষ্ক্রিয়ায় সৃজিত এক অপূর্ব সিম্ফনি! প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ঐতিহ্যের কী বিরল পরিণয়! অবশ্য এ ক্ষীণতনু সংকলনে চয়িত সব গল্পেই যে ঈশপীয় উপাদান বিদ্যমান বা সুর ধ্বনিত হচ্ছে, তা নয়। তবে সব কাহিনীতে পশুপাখির ব্যবহার না হলেও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমরা দেখতে পাবো, ঈশপীয় নির্যাস এখানে প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত। সুফি মাস্টার বা গ্র্যান্ড মাস্টাররা সংকলনভুক্ত সব গল্প বলেছেন শিষ্যদেরকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে। গল্পগুলো বলেছেন রুমি, সাদী, জুনায়েদ, বায়েজিদ, আত্তার, নিজাম উদ্দিন, হাসান বসরী, তাপসী রাবেয়া আর বাহলুলের মতো আধ্যাত্নিক সাধকগণ। গল্প বলিয়েদের কাতারে আছেন আল গাজ্জালির মতো আলোকিত চিন্তক আর মোল্লার মতো বুদ্ধিদীপ্ত রসিক লোকও। পবিত্র হাদিস শরিফের ছোট্ট একটি ঘটনাও চিরন্তন উপযোগিতার কারণে সংকলনে যুক্ত আছে।