কবিতার হৃদয়-ভূমি চৈতন্য-লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করে শব্দের অন্তরে জীবন-বীজ বুনেন কবি অনিমেষ দাস। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আগুন রঙের জলে শব্দের মিছিল’ গ্রন্থটি দেশবরেণ্য আবৃত্তিশিল্পীসহ পাঠক-মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ৭ আগস্ট বাবা কামাক্ষা দাস, মা অরুণারানী দাসের কোলজুড়ে পরিবার আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন কবি অনিমেষ দাস। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিলেন খোকন। কবি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের সুবজ প্রকৃতিতে ঘেরা নীলটেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মেধাবী, সৃষ্টিশীল ও খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব বাবু নগেন্দ্র চন্দ্র রায়, খান আতাউর রহমান, কণ্ঠশিল্পী কিরণচন্দ্র রায়, নোবেল বিজয়ী ড. অর্মত্য সেন, কোকিল কণ্ঠী শিল্পী নীনা হামিদ, চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ পুরুষ হীরালাল সেন, ভাষা শহিদ রফিক, জারি গানের এক অনন্য পরিচিত কণ্ঠ খেইমুদ্দিন বয়াতী এবং বাউল সম্রাঙ্গী মমতাজ বেগম প্রমুখ মানিকগঞ্জের সন্তান। সেই মানিকগঞ্জের বাউল-আকাশে বেড়ে ওঠা আরেকজন কৃতিসন্তান প্রথিতযশা কবি অনিমেষ দাস। বাবা কামাক্ষা মাস্টার ও নগেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার-এর (যে পাঠাগারটির দেহাবশেষ আজ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর) অনুপ্রেরণায় বাল্যকাল থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়েন। বই পড়তে বসলে চারপাশে খবর নেয়ার সময় কই! সহপাঠীরা তাঁকে বইপোকা বলে ডাকতো। কবি এভাবেই বাল্যকাল কাটিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেন। কবির অপাঠ্য বই পড়ার ঝোঁক এবার হুমায়ুন আজাদ, লালন সমগ্র, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বার্টান্ড রাসেল, প্রবীর ঘোষ, আরজ আলী মাতুব্বর, নিমাই ভট্টাচার্য, কাজী নজরুল, রবার্ট ফ্রস্ট, খ্যাপা শেলী, অ্যানি সেক্সটন ও হুমায়ূন আহমেদ থেকে শুরু করে সমসাময়িক সাহিত্যেকদের লেখা কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধের দিকে মোড় নিলো। পরবর্তীতে তিনি ধীরে ধীরে লেখালেখির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বিশেষ করে হুমায়ূন আজাদের প্রবন্ধ, গল্প-কবিতা, জীবনানন্দ দাশের মৌলিক সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি। কবির ব্যতিক্রমী প্রতিটি কবিতায় ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমাজ থেকে কুসংস্কার আর গোঁড়ামি নির্মূলের আওয়াজ। সত্যিকার অর্থে কবির চলার পথ অতটা সহজ ছিল না। আজ কবি যে অগ্নিঝরা কাব্যকথনের সৃষ্টি, একের পর এক দুঃসাহসিক যে অমর কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, প্রবচন লিখে যাচ্ছেন তার লেখন শৈলীর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে দুঃখ-যন্ত্রণার আর এক কাব্যগ্রন্থ। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্য ছায়া’ লেখার মূল জ্বালানি তাঁর স্ত্রী এবং বন্ধু-বান্ধবরা। সকলের অনুপ্রেণায় তিনি একজন বাংলা সাহিত্যের সৃজনশীল ধারার চিন্তাশীল কবি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। কবি অনিমেষ দাস তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর। তাঁর অনবদ্য কবিতাগুলো যে নিঃসন্দেহে সমাজ শুদ্ধ করবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জয় হোক কবিতার।