মফিজ ক্যানভাসার। বাতের মলম, সালসা, পাথরের আংটি ক্যানভাসিং করে বিক্রি করে। ঢাকার অফিসপাড়া নামে খ্যাত মতিঝিলে আজ তার ক্যানভাস স্থল। কাঁধে একটি কাপড়ের ঝোলা, গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী, পরনে সাদা পায়জামা, মুঠো পরিমান দাঁড়ি, মাথায় টুপি এটা তার সাধারণ বেশ—ভূষা। কাপড়ের ঝোলাটি তার নিত্যসঙ্গি, এর ভিতরে যেন তার রাজ্য। মাঝে মধ্যে একপাশে গ্লাস দেওয়া একটা ব্রিইফকেইজের মত তার হাতে দেখা যায়। যাতে হরেকরকমের পাথরের আংটি সারি সারি করে সাজানো থাকে। দৈনিক বাংলা মোড়ে ফুটপাতে একটু খালি জায়গা পেয়ে বসে পড়লো। তার সংগ্রহে পাঁচ হাজারের মত অডিও গান আছে। সেখান থেকে বাছাইকৃত সেরা গানগুলো বাজছে। সে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে মমতাজের গান। ‘বন্ধু যখন বৌ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায়, ওরে বুকটা ফাইট্রা যায়...’ এ গানটি সে দিনে অন্তত দশবার শোনে। পৃথিবীর সর্বাধিক গানের ক্যাসেড বের করে গ্রীনিজ বুকে নাম লিখিয়েছে মমতাজ। মততাজের গান মফিজের সবচেয়ে প্রিয়। পাচঁ—ছয়জন দাড়িয়ে ব্রিইফকেইজের আংটি দেখছে আর গান শুনছে। একজন গানের সাথে ঠোঁট মেলাচ্ছে আর প্রভু দেবার মত নাচছে। ‘মোকাবেলা ও লায়লা’ গানটির সাথে সত্যি সত্যি প্রভু দেবার মত নাচার চেষ্টা করছে। তার শরীরের গঠন দাঁড়কাঁক সমতুল্য। দেখতে কিছুটা হিরোইনসির মত। মনে হয় কঙ্কাল নাচছে সামান্য বাতাসেই উড়ে যাবে। একজন বলল, ‘এই ব্যাটা, তোর কাছে কি রুবি পাথর হবে ?’ ‘হবে ভাইজান। একটা জটিল রুবি পাথর হবে। ভাইজান বেয়াদবী নিবেন না, আপনার নামটা জানতে পারি ?’ ‘নাম দিয়ে কাম কি ?’ ‘কাম আছে ভাইজান। মানুষের নামের সাথে ভাগ্য জড়িত, জানেন না ?’ ‘জ্ঞান দিবি না। আমি ভাগ্য বিশ্বাস করি না। কাজ অনুপাতে ভাগ্য। কাজ করলে ভাগ্য খুলে, না করলে কিছুই হয় না। আইনস্টাইন যদি কাজ না করতো তার ভাগ্য খুলতো না।’ ‘বলেন কি ভাইজান! ভাগ্য ছাড়া দুনিয়ায় কিছুই হয় না। আগে নামটা বলেন তারপর কি করছি দেখেন।’ ‘আমি কুসংস্কার বিশ্বাস করি না।’ ‘কুসংস্কার আবার কি ?’ ‘কুসংস্কার হলো তোর মতো ভাগ্য—টাগ্য বিশ্বাস করা। তুই এসব বুঝবি না।’ ‘ভাইজান, এই অধম সব বুঝে। আপনার নামটা একবার বলেন। সব ঠিক ঠিক বলে দিব।’