সময় ও জীবন আমাদের চারিপাশ থেকে আবৃত করে রাখে, আমরা বাস করি সময়ে ও জীবনে। আমাদের প্রতিটি কাজ ও কথা সময় ও জীবনের প্রতিধ্বনি, প্রতিচিত্র। দুর্ভাগ্য আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যেসময়ে চারপাশে দৈত্যনাচন, প্রেতের উল্লাস। অশুভের কাছে শুভ বারংবার পরাজিত। আমাদের চারপাশে এক নিষ্ঠুর সময়ের ক্রুর খেলা অবিরত চলে। যারা সংবেদনশীল তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চান, কিন্তু পারেন না যারা সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের বিধিনিষেধ আর কন্ঠরোধী মনোভাবের কারণে। কৃপার বদলে দুর্বৃত্তের হাতে দুলে ওঠে কৃপাণ। আমাদের জীবনও ফুলের বাগান হয়ে ওঠার পরিবর্তে হয়ে ওঠে কাটার জঙ্গল। ফুল কীটদষ্ট, পাতা বিবর্ণ। পতন আর প্রতারণাই হয়ে ওঠে প্রেমের পরিণতি। বোদলেয়ারের ক্লেদজ কুসুম যেন আমাদের জীবন, যেখানে মানবিক মূল্যবোধগুলো তিরোহিত, বিশ্বাস বিপর্যস্ত প্রবঞ্চনায়, সৌন্দর্য ও সুচেতনা নির্বাসনে। সময় যখন অবরুদ্ধ ও বৈরী, প্রকাশ যখন অবদমিত ও ব্যহত, তখন কবির কলম হয়ে ওঠে প্রতীকি ও ইঙ্গিতধর্মী। মনের অভিব্যক্তি যখন সরাসরি প্রকাশ করা যায় না তখন এ ছাড়া উপায় থাকে না কবি-লেখকের। যে মুক্ত স্বাধীনতা একজন কবির প্রাপ্য ও অধিকার সে যখন তা থেকে বঞ্চিত হয় তখন তার প্রকাশ হয় অপ্রত্যক্ষ, প্রতীকায়িত ও রূপকেমোড়ানো। কবি শহিদ আজাদের ‘সময়ের এপিটাফ জীবনের এপিটাফ' এক রুদ্ধ সময়, পিষ্ট জীবনের কাব্যছবি। সময় মৃত, জীবন মৃত, কবি তাই লিখে যান সমাধিফলকের কথামালা। তিন পর্বে বিভক্ত এই সাহসী ও প্রতিবাদী কাব্যটি আশা করি সচেতন কাব্যেমোদীদের মনোযোগ কাড়বে। - কামরুল হাসান