এ গ্রন্থের লেখাগুলোর একটা ইতিহাস আছে। লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে যখন ১৯৭৬ সালে হাওয়াই গিয়েছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে ই এস ও এল (ইংলিশ ফর দি স্পিকারস অব আদার লাঙ্গুয়েজেস) কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য তখন তিনি লেখাগুলো প্রতি সপ্তাহে দেশে পাঠাতেন দৈনিক সংবাদ-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের জন্য। সেগুলো সংবাদে ছাপাও হয়েছিল। কিন্তু পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় ২৭ বছর পর, লেখক যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। আজ প্রায় ৪৫ বছর পর বইটি পুণর্মুদ্রিত হচ্ছে নতুন অঙ্গসজ্জায়, কিছু দুর্লভ ছবিসহ। এ গ্রন্থে উল্লেখিত অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু লেখাগুলোতে বিধৃত লেখকের অনুভূতি আজও তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। সময় বদলায়, মানুষের সুখদুঃখ হাসিকান্নার রং বদলায় না। কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময় তাঁর এ বইয়ের প্রধান আকর্ষণ। আমাদের নিকট ও দূর প্রতিবেশী দেশগুলোর সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নানাভাবে আলোচিত হয়েছে। মালয়েশীয় ও হাওয়াই সমাজে ভূতপ্রেতে বিশ্বাস আমাদের চেয়েও গভীর। কাঠগোলাপ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে মৃত্যুর ও শোকের প্রতীক, তাই আনন্দঘন মুহূর্তে এ ফুল কাউকে উপহার দিতে নেই। হাওয়াই এর অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এর অধিবাসীদের জীবনবৈচিত্র, এর ইতিহাস, দ্বীপবাসীদের সাংস্কৃতিক জীবন, এদের গান নৃত্য পূজা বন্দনা ইত্যাদির বর্ণনা আছে এ গ্রন্থে। আমেরিকার মূল ভূখণ্ড ভ্রমণের সময় লেখক অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় তুলে ধরেছেন সে দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে। কয়েকটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি নিবিড়ভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে ভ্রমণকাহিনির একটা মিষ্টি আমেজ আছে যা পাঠককে মুগ্ধ করে।
মােহাম্মদ হারুন অর রশীদ জন্ম: মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর, সিরাজদিখান থানার টোল বাসাই গ্রাম। একাডেমিক শিক্ষা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এস.এস, এল.এল.বি। পেশা : অ্যাডভােকেট লেখক স্কুলজীবন থেকেই পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। '৬৮, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে লেখক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতাত্তোর লেখকের প্রথম একুশের সংকলন ‘রক্তাভাে বাংলা প্রকাশিত হয় ১৯৭২। সালে। সে বছরই লেখকের কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে। লেখক একসময় ‘উচ্চারণ সহিত্যচক্র' নামক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ‘চর্চা' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। উচ্চারণ। সাহিত্যচক্র দেশের ২৮টি প্রগতিশীল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। লেখক জাতীয় মিডিয়া চ্যানেল আই’-এর ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে মুখপত্র ‘জনভাষ্য ২০০৮-এর একজন নিবন্ধকার নির্বাচিত হন। লেখকের গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাস, কাব্যগ্রন্থ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে মােট ১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । লেখকের অপ্রকাশিত উপন্যাস ‘পাথর মানুষ’ ও ‘আমাজন জঙ্গলে ১২০ দিন। লেখক একজন একনিষ্ঠ আইনজীবি।