ইকবালের The Development of Metaphysics in Persia ১৯০৮ সালের মিউনিখের পিএইচডি থিসিসের অবলম্বনে লেখা। সে বছরই তা বই করে ছাপা হয় লন্ডনের লুজাক এন্ড কোম্পানি থেকে। পরে এটি ফারসি, উর্দু, ব্যসনিয়সহ অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইকবাল গবেষণা শুরু করেন লাহোরে প্রাচ্যবিদ টমাস অরনল্ডের সঙ্গে। সেই কাজ জার্মানি ও ইংল্যান্ডে চালু রেখে তার সমাপ্তি টানেন মিউনিখে। ইকবালের ডক্টরেট ডিগ্রির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ফ্রিতজ হোমেল। এই বিষয়ে ইকবালের আগে কেউ ইংরেজি ভাষায় গবেষণা করেননি। গবেষণায় তিনি পারস্যের অধিবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনার ব্যপ্তি ইসলামপূর্ব কাল থেকে উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত। শুরু জরথ্রুস্তবাদ থেকে বাহাই দর্শনের সূত্রপাত পর্যন্ত। পারস্যে ইসলামের অধিবিদ্যা চর্চার বিকাশে ইসলামপূর্ব বিশ্বাস পদ্ধতির কী ভূমিকা ছিল? ইসলামের আগমনের পর গ্রিক চিন্তারই বা কোনো ভূমিকা ছিল কি? এই প্রশ্নটি ইকবালের এই বইয়ের অন্যতম একটি আলোচ্য বিষয়। ইকবালের মতে পারস্য মনন ইসলামকে তাঁদের দীর্ঘ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সাপেক্ষে আবার বিবৃত করেছে। ইকবাল দাবি করেন যে পারস্যের অধিবিদ্যার বিষয়গুলোর সংস্থান বাস্তবকে দ্বৈতবাদী আর একত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির মাঝের সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, ইসলাম-পূর্ব মাজিবাদী দ্বৈতবাদ আর ইসলাম-পরবর্তি গ্রিক দ্বৈতবাদ, এই দুইয়ের সঙ্গে মোকাবিলা পারস্যের অধিবিদ্যা চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি ইকবালের প্রথম বই। তখন ইকবাল তাঁর চিন্তার মাধ্যম হিসেবে কাব্যকে আশ্রয় করেননি। বইটি পূর্ব বা পশ্চিমে কোথাও খুব বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। কিন্তু ইকবাল ইসলামি দর্শনের এমন একটি দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন যা ১৯৭০-এর আগে আর আলোচিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এর একমাত্র বাঙলা অনুবাদটি গ্রন্থাকারে উপলব্ধ ছিল না। অনুবাদকের উত্তরসূরিরা সেটি প্রকাশের অনুমতি এবং অনুবাদক সম্পর্কে আলোচনা লিখে দিয়ে আমাদের বাধিত করেছেন। সমগ্র বাংলাভাষীরা এর জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন। সব মিলিয়ে এই বইখানি আবার ছাপারূপে হাজির হয়েছে। এতে ইকবালের বিশ্লেষণের যে মেজাজটি পাওয়া যায় তা বর্তমান সময়ের আগ্রহী চর্চাকারীদের জন্য মূল্যবান একটি উপাদান হতে পারে এতে সন্দেহ নেই।