"আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সংসারের নিয়ম এই যে, কোনাে কিছু পেতে হলে তার জন্য মূল্য দিতে হয়। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে পাওয়ার জন্য আমাদের জাতিকেও বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে। অগনিত নারী, পুরুষ ও শিশুর প্রাণ এবং বিপুল সম্পদের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই রাষ্ট্র। যারা সাধারণ মানুষ, দেশ ত্যাগ করে ভারতে যায়নি, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি, তারাও মুক্তিযােদ্ধাদের আহার ও আশ্রয় দিয়ে প্রয়ােজনীয় সামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে জনসমর্থন এবং জনগণের সাহায্য-সহযােগিতার মূল্যও অপরিসীম। বর্তমান গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধকালে নির্যাতিতা কিছু নারীর মর্মান্তিক কাহিনী। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেই, ১৯৭২ সালে, বঙ্গবন্ধু সরকার পরম মহানুভবতায় এই নারীদের 'বীরাঙ্গনা' বলে ঘােষণা করেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেন। নানাভাবে সরকার তাদেরকে আর সবার মতাে মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। আমাদের সমাজ কিন্তু যথেষ্ট উদার মানসিকতার অধিকারী নয়। নানা রকম সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ঔচিত্য-অনৌচিত্যের প্রশ্নকে আড়াল করে সামাজিক নিষ্ঠুরতাকে কেবল প্রশ্রয় নয়, প্রাধান্য দেয়। এই বৈরী বাস্তবতায় অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকল্যাণের মনােভাব নিয়ে সাহসের সঙ্গে রচনা করেছেন এই গ্রন্থ। তিনি সরজমিনে তদন্ত করে তথ্য নির্নয় করেছেন। এবং বীরাঙ্গনাদের অন্তর্জালা তাঁদেরই জবানিতে সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম (১৯২১-২০০২) ছিলেন তাঁর কালের বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে, উপন্যাস নাটক ও ছােটগল্প-লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রভাবশালী ও সম্মানিত। বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ আবদুল হাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগকে যে গৌরবজনক অবস্থানে উন্নীত করেছিলেন, তাতে অধ্যপক নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী'। তাঁর জন্মস্থান খুলনা জেলায়, তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে পিএইচ ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনায় তিনি প্রগতিশীল অবস্থান নিয়ে কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও রােকেয়া হলের প্রভােষ্ট হিসেবে, বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেশে অবস্থান করে, আত্মক করেন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। কর্মজীবনে তিনি কাজ করেছেন দেশের বৃহত্তর বুদ্ধিজীবী সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। যুদ্ধোত্তর সময়টাতে তিনি বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে এবং যুদ্ধশিশুদের সুব্যবস্থার জন্য কাজ করেছেন। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমের জীবন ছিল কম।