ছোটগল্পের সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয়-চতুর্থ দশকে। তখন থেকেই এটা একটি নির্দিষ্ট শিল্পরূপ পেতে থাকে। ছোটগল্পের জন্য কোনো আকস্মিকতা থেকে নয়। এটা বিদিত বিষয় যে-খুব দ্রুত অপপ্রীয়মান ঘটনাপুঞ্জ এবং সময় ও মুহূর্তের নিয়মেই ছোটগল্পের জন্ম। আধুনিক জীবন ও অস্তিত্বের একটা আভাস, রূপ-প্রতিরূপ পায়। মায়ায় মায়ায় আর তারই কায়ায় খানিকটা নিবিড় হয়ে ওঠে। সেই নিবিড়তা যেন লৌকিক ও অলৌকিক আবর্তে এক অত্যাশ্চর্য আবময়তায় অর্ন্তলীন হ'য়ে ওঠে। এটাই তো ছোটগল্পের স্বভাবজ অবস্থান। আর আনন্দময় অবস্থিতি। আধুনিক জীবন আর সাম্প্রতিকতার সংশ্লিষ্টতায় মানব জীবন শৈল্পিক নান্দনিক মাত্রায় বিশ্লিষ্ট হতে থাকে। ছোটগল্পের 'ছোট' নির্মাণ শিল্পীর একটা মস্তবড় দায়। ছোটগল্পকে যেমন আয়তনিক মাত্রায় ছোট হতে হয়-তেমনি নির্মাণে প্রতিটি শব্দই অনিবার্য। 'কেউ কেউ কেবল কাঙাল হয়'- কবি তসলিমা হাসান- এর একটি কাব্যগ্রন্থ। এর আগেও তার দু'টি ছোটগল্পের বই প্রকাশিত হয়েছিলো। তিনি কবি ইকবাল হাসান-এর প্রিয়তমা স্ত্রী পরমতমা। ইকবাল হাসান আমার এক জন্ম-সহোদর। ছাত্রজীবনে, কবি ইকবাল হাসান বাংলার মানুষের জাতিসত্ত্বা ও বাঙালিয়তার সাজাত্যবোধের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় অন্তবর্তী হতে সমর্থ হয়েছিলেন। তসলিমা হাসান এর আগের ছোটগল্পের বই দুটির নাম 'আঁধার কন্যা' ও 'নিঃশব্দে নিশীথে'। তসলিমা হাসান-এর গল্পগ্রন্থের নাম 'প্রস্ফুটিতা'। ১৪টি গল্প নিয়ে এই বই প্রকাশ পাচ্ছে একুশে বইমেলায়। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা, আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে প্রাতিষ্ঠানিক-ঐতিহাসিক করে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সর্বজনীন-ভাষা-জন্মজনীন বহুমাত্রিকতার সৃষ্টি করেছে। আমাদের মাতৃভাষার এই মহান মর্যাদাকে আমাদের বহুদূরগামী করে তুলতে বিপুল দায়িত্বভার বহন করে যেতে হবে যুগ-যুগান্তর। 'প্রস্ফুটিতা'র প্রকাশনা বেশ সৌকর্যন্তই বটে। এই সংকলনের সবক'টি গল্পই যেন কষ্টিপাথরে ঘসা হিরন্ময় টুকরো। বিশেষ ক'রে ‘প্রস্ফুটিতা', 'রাজেশ্বরী কুঞ্জ', ‘মানবজীবন', 'দায়িত্বের অবসান', 'অসময়ের বসন্ত' এবং 'ডায়েরি' শীর্ষমুখ দাবিদার। তসলিমা হাসান-এর গাল্পিকতার নৈপুন্য অর্থাৎ নান্দনিকতার চিত্রকর্ষ প্রশংসা করি। এ বই যেন পাঠকপ্রিয়তার মাত্রা অতিক্রম করে যেতে পারে। সেটিই অনেকাংশে প্রত্যাশা আমার এবং বইটির প্রকাশক কবি আবুল খায়ের এর প্রকাশনায় স্বভাবজাত ও শত শুভেচ্ছা প্রাপ্য। আল মুজাহিদী বীর মুক্তিযোদ্ধা, 'একুশে পদকপ্রাপ্ত সম্পাদক, 'নতুন একমাত্রা'
কানাডা প্রবাসী বরেণ্য কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা হাসানের জন্ম বরিশাল শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা সেকেল উদ্দিন আকন এবং মাতা সুফিয়া আকন। স্বামী কবি, লেখক ইকবাল হাসান, এক কন্যা সন্তান বিজ্ঞানী শচী রহমান। শিক্ষাজীবনঃ বরিশাল সদর গার্লস স্কুল থেকে এস সি, বরিশাল ওমেনস কলেজ থেকে আই এস সি, সরকারী ব্রজমোহন থেকে অনার্স শেষ না হতেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। সাহিত্য চর্চাঃ স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু। ১৯৯০ সাল থেকে উওর আমেরিকা, কানাডা ও বাংলার প্রকাশিত সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখার সাথে যুক্ত আছেন। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুটো বই-নি:শব্দে নীশিতে, আঁধার কন্যা। বই দুইটি প্রকাশের পর তাঁর নাম-ডাক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । যা লেখককে আরো বেশি উৎসাহ দিয়েছে সাহিত্য চর্চায় । ২০২২ সালের বই মেলায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ : কেউ কেউ কেবল কাঙাল হয়' প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা ও কলকাতা থেকে। 'প্রস্ফুটিতা' তাঁর তৃতীয় গল্পের বই। পেশাগত জীবনঃ ১৯৮০ সাল থেকে দেশের বাইরে আছেন। কানাডায় চাকরিরত আছেন। বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ আমেরিকান একটি কোম্পানীতে চাকরি করছেন। কানাডার টরেন্টোতে পরিবারের সবার সাথেই বসবাস করছেন । শখঃ লেখালেখি, কবিতা, গল্প, পড়া, রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া। আধুনিক গান শোনা কবিতা আবৃওি করা, ভ্রমণ। প্রিয় লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ, কমল কুমার মজুমদার, সৈয়দ সামছুল হক, শামছুর রহমান, ডক্টর জ্যোতি প্রকাশ দও, ডক্টর পূরবী বসু, রাহাত খান, ফ্রান্স কাফকা, টেঁট হিউজ। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি সমাজ পরিবর্তনে কবিতা গ্রুপের সম্মানীত উপদেষ্টা। পেশাগত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিরলসভাবে সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিবেদিত রাখতে পেরেছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে দেশের বাহিরেও প্রসারে ভূমিকা রাখছেন।