এ নিয়ে তো কোন সন্দেহই নেই যে, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একজন খাপ-না-খাওয়া মানুষ। যাঁরা একই সঙ্গে বড় ও মহৎ তাঁরা অবশ্য এই রকমেরই হন। কিন্তু ভাসানী তো আবার খুবই সাধারণ একজন মানুষ। বেশভূষা আচার-আচরণ জীবনযাপন চালচলন মুখের ভাষা, সর্বদিক দিয়েই একেবারে সাধারণ তিনি। জন্মেছিলেন যে পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে, তাতে ওই রকমের সহজ সরল জীবনযাপন অস্বাভাবিক ছিল না তাঁর জন্য। বরঞ্চ সেটাই ছিলো পুরোপুরি স্বাভাবিক। কৃষক পরিবারের যে বালক অল্প বয়সে পিতৃমাতৃহীন হয়, যত্ন নেবে আশেপাশে এমন লোক পায় না, ডাক নাম যার চ্যাগা মিয়া, তিনি লাটবেলাট মন্ত্রী মেম্বার হবেন এটা প্রত্যাশিত নয়, ভাসানী সেটা হনও নি। কিন্তু তিনি যে অসাধারণ ছিলেন তা অস্বীকার করবে কে? অসাধারণ বিশেষ করে এই জন্য যে, তিনি সাধারণ ঘরে জন্যে অনেক বড় মাপের মানুষ হয়েছিলেন, এবং সেই সঙ্গে অত্যন্ত মূল্যবান এই অতিরিক্ত কারণেও যে, অসাধারণ রকমের বড় হয়েও যে তাঁর জন্ম ও বাল্যকালের সাধারণত্ব সেটাকে রেখেছেন সঙ্গে, বর্জন করবার কথা কখনোই ভাবেন নি। থেকেছেনও জনগণের সাথেই। ভাসানী অনেক উঁচু মাপের মানুষ, পর্বতের সঙ্গে তাঁকে তুলনা করাটা অন্যায় হবে না, কিন্তু সেই সঙ্গে আবার নদীর মতো তিনি প্রবহমান, জনজীবনের জন্য অশেষ রকমের কল্যাণকর তাঁর ভূমিকা। তাঁকে খাপে ফেলে বর্ণনা করা অসম্ভব। আজীবন তিনি রাজনীতিতে ছিলেন। রাজনীতির বাইরে তাঁর অন্য জীবন ছিল না। রাজনীতির মূল ব্যাপারটা কি? সেটা হচ্ছে ক্ষমতা। মওলানা ভাসানীও ক্ষমতাই চেয়েছেন; কিন্তু সেটা তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থে মোটেই নয়। ক্ষমতা চেয়েছেন তিনি জনগণের জন্য, তাঁর রাজনীতি ছিল প্রকৃত অর্থেই সামাজিক বিপ্লবের। সমাজে মানুষের ওপর মানুষের নিপীড়নের অবসান তাঁর কাম্য ছিল বলেই রাজনীতিতে এসেছেন তিনি। ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের বিবেচনাকে সামনে রাখেন নি।