প্রথম ফ্ল্যাপের লেখাঃ আমরা সমসাময়িক। কবিতার সঙ্গে আমাদের সখ্যও একই সময়ে। দুলালের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সময়কাল ক্যালেন্ডারের হিশেবে চল্লিশ বছর। চার দশকের কবিতাযাত্রায় আমরা সহযাত্রী। সহযোদ্ধা। বলছি কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কথা। যাঁর কবিতার আমি অনুরাগী পাঠক। মনোযোগী শ্রোতা। ২০২০ সালের সূচনায় কোভিদ ১৯-এর হিংস্র থাবার বিস্তারে তছনছ হয়ে যায় পৃথিবীব্যাপি মানুষের যাপিত জীবনের সমস্ত হিশেব নিকেশ। কোভিদ ১৯ বা করোনা মহামারীতে দুনিয়াব্যাপি নিভে যায় প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের জীবন প্রদীপ। মানুষকে গৃহবন্দী করে ফেলে প্রাণঘাতী অদৃশ্য এই ভাইরাস। একাকী, নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন গৃহবন্দী জীবন মানুষকে নিক্ষিপ্ত করে ডিপ্রেশনের অতল অন্ধকারে। পাল্টে যেতে থাকে অস্থির মানুষের স্বভাব ও আচরণ। পালটে যেতে থাকে শিল্পের ভাষা। কবিতার ভাষা। দুই বছরের কোভিডকালীন অস্থির সময়ে পালটে যেতে দেখি কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কবিতাও। এই সময়কালে রচিত দুলালের কবিতাগুলোর চরিত্র ও চারিত্র্যে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। দুলালের কাব্যভাষা, উপস্থাপনা ভঙ্গি, উপমা-উৎপ্রেক্ষা, প্রেক্ষাপট সবকিছুতেই এক ধরণের অস্থিরতা লক্ষ্য করি। তাঁর কবিতার চিত্রকল্পগুলো হয়ে ওঠে অস্থির চঞ্চল ক্ষিপ্র তীব্র তীক্ষ্ণ ও নির্মম। নিয়ন্ত্রণহীন। বেপরোয়া। সুশীল-দৃষ্টিতে কখনো কখনো অমার্জিতও। 'পাখিদের বিবাহিত জীবন এই গোত্রের কবিতার অনুপম এক সংকলন। আধুনিক বাংলা কবিতার নিবিষ্ট পাঠক হিশেবে একথা আমি জোর গলায় বলতে পারি- পাখিদের বিবাহিত জীবন নামের এই কবিতাগ্রন্থটি কবি হিশেবে দুলালকে অধিষ্ঠিত করবে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনায় নতুন এক উচ্চতায়। বন্ধু দুলালের জন্যে তিন উল্লাস। লুৎফর রহমান রিটন হিউস্টন, টেক্সাস। ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ দ্বিতীয় ফ্ল্যাপের লেখাঃ বহুগামিতা দোষের হলেও সাহিত্য বহুগামী হওয়ার মধ্যে জঙ্গমত্বের সুঠাম প্রকাশ পায়। বিশেষ করে কবিতার ক্ষেত্রে এমন বিচিত্রগামীতা বিস্ময়কর। কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল তাঁর কবিতায় বাঁকবদল ঘটান ক্ষণে ক্ষণে। পাঠক সেই কবিতার ফসলগুলি মুগ্ধতাবশে কুড়াতে কুড়াতে সহসা আবিষ্কার করেন সঞ্চয়ের বৈচিত্র্য। কাটতে চায় না এই মুগ্ধতা এই বিস্ময়র ঘোর। সেই ঘনঘোরের মালা গাঁথার সুতোর নাম বাংলাদেশ। তাঁর জার্নির আদিতেও বাংলা অন্তেও সেই বাংলা। ছিলা টানটান অনন্য বাংলাদেশ! বাংলাদেশ কবির অমোঘ উচ্চারণ অনন্ত ভালবাসা। সেই সাথে মিশিয়ে দেন বহির্বিশ্বে নানান বিষয়। ফলে তাঁর কবিতা হয়ে উঠে আন্তর্জাতিকতা। রোদ্রৌজ্জ্বল মাঠের কৃষকের পিঠে ঘামনুনের দানা আর শীত প্রধান দেশের বরফের দানা একাকার হয়ে মিশে যায় কবির কবিতায়। তিনি ঘন কুয়াশার স্থলাভিষিক্ত করেন তুষারপাতের দৃশ্য। এখানেই দুলালের কবিতার অনন্যতা। যাঁরা তাঁর কবিতার সঙ্গে পরিচিত তাঁরা জানেন বিষয় বিভিন্নতা কবির প্রধান অস্ত্র। তাঁর শব্দের জাগলারি মিথের ব্যবহার এবং বিন্যাস নিয়তই নতুন নতুন দিক নির্দেশ করে। কবিতা পড়ার জন্য পড়বেন অথচ ভাববেন না তা তো হবার নয়। আধুনিকতার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কবি ভাবতে বাধ্য করেন। অতীত থেকে ভবিষ্যত ভাবতে ভাবতে কখন যে ভাবা অভ্যেস হয়ে গেছে আপনি টেরটিও পাবেন না। একটি কবিতায় একাধিক ভাবনা এক ঘোর থেকে আরেক ঘোর তৈরি করে আপনাকে মোহগ্রস্থ করে রাখবে। তাঁর কবিতা মীথ, প্রাচীন প্রবাদ থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রযুক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই সাথে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা লক্ষ্যনীয়। ইতিহাস-ঐতিহ্য-ভূগোল-বিজ্ঞান-ধর্ম-মানবতা কি নেই তাঁর কবিতায়? সেই উজ্জ্বল স্বাক্ষর এই ‘পাখিদের বিবাহিত জীবন’ । -যযাতি দেবল পশ্চিম বঙ্গ, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘প্রতিদিন কাটে তাঁর সৃষ্টির নকশিকাঁথায়’- তিনি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। জন্ম শেরপুরে ৩০ মে ১৯৫৮। সত্তরের দশকে দৈনিক ও সাপ্তাহিকপত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবনের সূত্রপাত। ১৯৮০-তে সরকারি চাকুরিতে যোগদান। ১৯৯৬ সালে বাধ্যতামূলক অবসর। অতঃপর পুরোদস্তুর লেখালেখিতে মনোনিবেশ। প্রবাসী বাঙালিদের জন্য নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’-এর কর্ণধার। প্রবাস থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকার সাথে সংযুক্ত। জড়িত আছেন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে।