চলমান বিশাল মহাবিশ্বের অন্য সবকিছুর সাথে দ্রুত ধাবমান, “তুচ্ছাতিতুচ্ছ” পৃথিবী নামের যে বিন্দুটিতে আজ সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের বসবাস, সেখানে তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, হিংসা-ভালবাসা, যুদ্ধ-শান্তি, জয়-পরাজয়, অহঙ্কার- গ্লানি এবং মান-অভিমানের যে স্মৃতি জন্ম নিচ্ছে প্রতিনিয়ত তা কি তুচ্ছ? কালের অব্যাহত যাত্রায় প্রতিটি মুহূর্তেই বর্তমান হয়ে যাচ্ছে অতীত, যার কিছুটা আমাদের ব্যক্তিক ও সামষ্টিক স্মৃতির অংশ, আর অনেকটাই বিস্মৃত। এ স্মৃতি স্থবির নয় - কখনও তীক্ষ্ণ, কখনও বা স্নিগ্ধ ও পেলব, কখনও অনেক আদরে লালিত ও প্রোজ্জ্বল, আর প্রায়ই অনাদর ও অবহেলায় ক্রমেই অপসৃয়মান কিংবা স্বেচ্ছাচারী বিকৃতির আতিশয্যে ক্ষত-বিক্ষত। “পথের স্মৃতি-বিস্মৃতি ও গন্তব্যভাবনা” এই স্মৃতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, ভাবনা, অনুভুতি ও উপলব্ধির অভিব্যক্তি। কখনও নিছক টিকে থাকার প্রয়োজনেই পথ চলা, কখনও মানব জীবনের উচ্চতর সম্ভাবনার হাতছানিতে বৈরী পথকেও বরণ করতে হয়। স্থান, কাল ও ব্যক্তিকে নিয়ে পথের ব্যাপ্তি আর স্মৃতি-বিস্মৃতির আলোছায়া। আমাদের জীবনে স্মৃতির গুরুত্ব এবং সুস্থ মাত্রায় রোমন্থনের প্রয়োজনীয়তার আলোকে স্মৃতির সাথে একটা সুস্থ লেনদেনের সম্পর্ক ও ভবিষ্যত-ভাবনার বৈচিত্রময় গল্পাশ্রিত বেশ কিছু প্রবন্ধ বইটিতে রয়েছে। বিষয়বস্তু বিবিধ - যেমন নববর্ষ ও বিভিন্ন বার্ষিকী, সমসাময়িক ঘটনার আকস্মিকতা, কার্যকারণ ও তাৎপর্য, ভাষা, নৈতিকতা, ধর্ম ও দর্শন, একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-দুঃখ ইত্যাদি। প্রেক্ষিত ব্যক্তিক থেকে পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন জুড়ে। একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিখন্ডগুলোর উৎস ছড়িয়ে আছে তিনটি মহাদেশে, আধাশতকেরও বেশি সময়কালে। প্রতিটি লেখার শেষে ঈঙ্গিত রয়েছে বিশেষ উপলব্ধি, আবিষ্কার ও লব্ধ শিক্ষার প্রতি। প্রবন্ধগুলোকে কাল বা বিষয়ের আঁটসাঁট অনুক্রমে বন্দী না করে কিছুটা মোজাইকের ধারণা ও পরিকল্পনায় নিতান্তই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ দিয়ে যাত্রা শুরু, তারপর বেশ দ্রুত ব্যক্তিগত স্মৃতি, শ্রুতি, পর্যবেক্ষণ বা অনুভুতিকে ছাপিয়ে, বৃহত্তর পরিমণ্ডলের জীবন ও ভাবনা মুখ্য হয়ে ওঠা, আবার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে ফেরা, সবশেষে ভবিষ্যত-ভাবনা ও আত্মসমীক্ষায় স্থান ও কালের এই বহুমাত্রিক স্মৃতির পরিক্রমার সমাপ্তি।