লিজি রহমানকে নিউইয়র্ক শহরের বাঙালিরা মোটামুটি সকলেই চেনেন। ব্যক্তিগত পরিচয় যদি না-ও থাকে – সব বাঙালিই তাঁর নামের সঙ্গে অন্তত পরিচিত। মৃদু ও মিষ্টভাষী, সুন্দর উচ্চারণ ও স্বচ্ছন্দ বাকক্ষমতার অধিকারী লিজি খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করেন, জড়তাহীন সাবলীল ভঙ্গিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, সাবলীল ভাষায় নিজস্ব এক মনকাড়া ভঙ্গিতে গল্প, ভ্রমণ কাহিনী ও কলাম লেখেন, দেশে-বিদেশের ইংরেজি ও বাংলা কাগজে ছাপান সেসব লেখা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রন্থের-ও রচয়িতা হয়েছেন লিজি। লিজি রহমান আজ নিজস্ব শোকদুঃখ ছাড়িয়ে এক বৃহত্তর ও মহত্তর কর্মপ্রেরণায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের জন্যে একটা জায়গা করে নিয়েছেন। এই মহিয়সী নারী তার আন্তরিক প্রচেষ্টা, কঠিন পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং অসামান্য দৃঢ়তা দিয়ে সম্পন্ন করেছেন এক অসাধারণ মানবিক ও মহৎ কর্ম। শুধু নিউ ইয়র্কের বাঙালি মহলে নয়, গোটা নিউইয়র্ক শহরে তো বটেই, সমস্ত যুক্তরাষ্ট্রের সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রায় সকলের কাছে তিনি আজ পরিচিত, আদরনীয় ও অনুসরণীয়। নিউইয়র্ক-এর প্রাক্তন মেয়র ডিব্লাজিও তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন, “লিজি নিজের ব্যক্তিগত শোককে মানুষের কল্যাণে কেমন করে উৎসর্গ করে অনন্য হয়ে গেলেন।“ আসিফের নামে এই বাইক লেনের উদ্বোধন লিজির ও বাংলাদেশের জন্যে আরেকটি বিজয়। একজন প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্র্যান্ট মা এবং একজন প্রতিবাদী ও মানবকল্যাণকামী অধিকার সচেতন নারী হিসেবে আমি লিজির নিজের হাতে লিখিত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি সম্বলিত নিজস্ব যাত্রার আখ্যান, এই গ্রন্থের, সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
লিজি রহমানের নেশা লেখালেখি করা। কৈশাের থেকেই তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার শিশু-কিশােরদের পাতায় নিয়মিত লিখেছেন। দীর্ঘ তিরিশ বছরেরও বেশি সময় আমেরিকা আছেন। সেখানে যাবার পরও তার লেখালেখিতে ছেদ পড়েনি। ঢাকা এবং নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাংলা এবং ইংরেজি দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায় বিভিন্ন ধরণের লেখা লিখছেন। এছাড়াও, লিজি রহমান নিউইয়র্কের সড়ক নিরাপত্তা এবং পথচারীদের জীবন রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিউইয়র্কের ‘বুলেভার্ড অব ডেথ' নামে খ্যাত ব্যস্ততম এবং বিপজ্জনক সড়ক কুইন্স বুলেভার্ডে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বাইক লেন স্থাপন করে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। রেখেছেন। এছাড়াও, নিউইয়র্ক শহরে গাড়ির গতি সীমা কমানাে, স্পীড ক্যামেরা স্থাপনসহ অন্যান্য আরাে অনেক জনকল্যাণকর কাজ করেছেন। লিজি রহমানের পেশা শিক্ষকতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে। মাস্টার্স এবং নিউইয়র্কের কুইন্স কলেজ থেকে এডুকেশনে মাস্টার্স করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি। ঢাকার শান্তিনগরে এক মুক্তমনা এবং সংস্কৃতিবান পরিবারে লিজি রহমানের জন্ম। তিনি বিশিষ্ট মানবতাবাদী আবদুল মালেক এবং রিজিয়া। বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্বামী শরিফুর রহমান বাচ্চু ২০১৮ সালে অসুস্থ্যতা জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ এক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেছে। বড় মেয়ে। মৌমিতা রহমান একজন এটর্নী এবং ছােট ছেলে নাফিস কলেজে পড়াশােনা করছে। লিজি রহমানের প্রকাশিত বই: ওহ! আমেরিকা, কিশােরীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ, রংধনুর দেশ, আমেরিকার যতাে কথা। তাঁর সম্পাদিত বই: Through the Rhymes রচনা আসিফ রহমান। ড. পূরবী বসু সম্পাদিত ছােটগল্প সংকলন The Golden Leaves বইতে লিজি রহমানের একটি ইংরেজি গল্প অন্তর্ভুক্ত আছে।