শতাব্দীর নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাসের সাক্ষ্যবাহী নদী বঙ্গভ‚মির উত্তরের তিস্তা। আর ‘তিস্তাপাড়ের গল্প’ মূলত উত্তরবঙ্গের সময় ও সমাজের আখ্যান। উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সারথি আর সাতকাহনের সাক্ষী হিসেবে তিস্তা স্থান করে নিয়েছে লোকসাহিত্য থেকে বাংলা সাহিত্যে। বাংলা কথাসাহিত্যে তিস্তা নদী এক বিশেষ অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে এর ভাঙা-গড়ার ইতিবৃত্তে। তাই পাতা প্রকাশ কর্তৃক গৃহীত ‘তিস্তাপাড়ের গল্প’ সংকলনটি এক অর্থে তাৎপর্যবাহী; কেননা নবীন ও প্রবীণ কথাসাহিত্যিকদের যুগপৎ সৃষ্টি স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। আমাদের বিশ্বাস, এই সংকলনটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের তিস্তাপাড়ের সময় ও সমাজকেই শুধু প্রতিনিধিত্ব করবে না, এক অর্থে তা প্রতিনিধিত্ব করবে নদীবিধৌত সারাবাংলার। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে, শুধুমাত্র রংপুর বিভাগের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে নবীন-প্রবীণ যারা লিখছেন, তাদের, অবশ্যই গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রচিত গল্প নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশের। ইচ্ছের কথাটি, রংপুর থেকে প্রকাশিত পাতা প্রকাশের প্রকাশক জাকির আহমদকে জানালাম। এরপর, নামটা ঠিক করে ফেসবুকে ঘোষণা দেয়া হলো। অনেকেই গল্প লিখে সাড়া দিয়েছেন। স্থান সংকুলানজনিত কারণে সব গল্প প্রকাশের সুযোগ না হলেও ‘তিস্তাপাড়ের গল্প’ সংকলনটি আলোর মুখ দেখলো। অশেষ কৃতজ্ঞতা সৌখিন আলোকচিত্রী রাকিব বিশ্বাসকে, বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপে ব্যবহৃত ছবি দেয়ার জন্যে; আর আমার ছবি তুলে দেয়ার জন্য বিনোদন পত্রিকা আনন্দ আলোর আলোকচিত্রী রাকিবুল হককে। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ রংপুরের কৃতিসন্তান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক গওহর গালিবকে। ধন্যবাদ জানাই বাংলা একাডেমিতে কর্মরত সহকর্মী আলতাফ হোসেনকে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জননন্দিত ছড়াকার আশাফা সেলিমকে, নানাভাবে বিশেষ সহযোগিতার জন্যে। ‘তিস্তাপাড়ের গল্প’ পাঠকদের মন ছুঁয়ে গেলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে, আশা করছি। বইপাঠবিমুখ এ হতভাগা দেশে বইটির বহুল প্রচার হবে কি না জানি না, তবে লেখনীর মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যাওয়ার লক্ষ্যে, তাদের সুখ-দুঃখ-ভালোবাসা-ন্যায়-অন্যায়-অবিচার-অনাচারসহ সামাজিক নানা বিষয়ে মর্মস্পর্শী কাহিনি রচনায় গল্পকারদের যে আন্তরিক প্রয়াস তা দমিত হবে নাÑএ বিশ্বাস আমার অন্তরে গ্রথিত।