গল্পবলা এবং শোনার প্রবণতা প্রাচীন, তবে সে নেশা আজকের মানুষকেও মোহাবিষ্ট করে। গল্প শুধু বলার বৃত্তে আবদ্ধ নয় জন্য মানুষ গল্প পড়তেও বিশেষ আগ্রহী। যে জন্য গল্প সৃষ্টির পথে অনেকেরই সমাগম। সে পথেরই যাত্রী রশীদুল ইসলাম চৌধুরী। সাহিত্যের জন্য দরদ ছোটবেলা থেকেই। কারমাইকেল কলেজে পড়া-লেখার সময় রোভার স্কাউট, বিএনসিসি এবং কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করতে গিয়ে সাহিত্য চিন্তা দানা বেঁধেছে মনে। স্থানীয় পত্রিকায় লেখা-লেখির প্রয়াস খেকে অগ্রগামী হবার সাহস সঞ্চারিত হয়েছে। বেতারের সাথে যোগাযোগ ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে আগ্রহের পারদ উপরে উঠতে শুরু করে। সাহিত্যের আর সব শাখার চেয়ে গল্পের প্রতি তাঁর আকর্ষণ অনেকটাই বেশি। সেজন্য গল্পের ভুবনে নিজের প্রতিভা বিকাশে মনোযোগী হয়েছেন। তিনি চাকরি জীবনে অনেকের কাছ থেকে শুনেছেন বিচিত্র গল্প, জীবনের বহু বর্ণিল কাহিনী। সেগুলোকেই ভাষা দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের অনুভূতির রঙে। শোনা কাহিনীগুলো বাস্তবতার আলোয় সমুজ্জ্বল, রশীদুল ইসলামও সে বাস্তবতার রঙকে ফিকে হতে দেন নি। প্রেম, ¯েœহ, ভালোবাসা আবার সংশয়, শঙ্কার বিপুল পরিধিÑএমন সংকট থেকে মুক্তির প্রত্যাশা ও পথের কথা বলেছেন অকপটে। রশীদুল ইসলাম চৌধুরী‘র প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘বিবর্ণ জীবনে আশা’। একা নন আশার রথযাত্রায় তিনি সবাইকে সাথী করতে আগ্রহী। গল্পগুলোর বেশির ভাগ কাহিনী গ্রামীণ জীবন ধারার। অনেকটা গতানুগতিক, চেনাঘটনা উপজীব্য করে লেখা। অভিজ্ঞতার রেশও উজ্জ্বল। কখনো কখনো ইতিহাসের পাতা উন্মোচনের প্রয়াস অতীত জানার সুযোগ করে দেবে। মানুষের জীবনের যে দ্ব›দ্ব, টানাপোড়েন, প্রাপ্তির আনন্দ, না পাবার বেদনা এমন অনেক ব্যঞ্জনা গল্পগুলোকে স্বাদু করেছে। বিকল্প, আত্মতৃপ্তি, প্রত্যাখানে প্রতিদান প্রভৃতি গল্পে নানামাত্রিক চেতনা নতুন বোধ জাগাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস করা যায়। নাম গল্পটিও আশাবাদের বিস্তৃত অঙ্গনে ডাক দিয়ে নিয়ে যাবে পাঠককে। চরিত্র ও পারিপার্শ্বিকতার প্রয়োজনে রংপুর অঞ্চলের ভাষা ব্যবহারেও বাস্তব বোধের পরিচয় মেলে। সব মিলিয়ে ‘বিবর্ণ জীবনে আশা’ গল্পগ্রন্থটি গল্পকার রশীদুল ইসলাম চৌধুরীকে পাঠকপ্রিয়তায় স্মরণীয় রাখবেÑএমন প্রত্যয়ী কথা বলা যায় দ্বিধাহীনতায়। প্রত্যাশা করি আগামী দিনেও তাঁর সৃষ্টিধারা থাকবে বেগবান ও বহমান।