এই সংকলন প্রসঙ্গে আজ আমার যা বৃত্তান্ত কাল তারই পৃথিবীতে গল্পকথা হবে আজ জো সরগুযস্ত হ্যায় আপনি কাল উসিকি কাহানিয়াঁ বনেগি নির্দোষ পাঠ বলতে কিছু নেই। ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যমান দাপুটে প্রায় সকল পাঠ হচ্ছে বিস্মৃতির পাঠ। এই সকল পাঠ নির্ধারিত হয় অন্য কোনো পাঠকে ভুলিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে। ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান রাষ্ট্র ও সামাজিক বহাল সংগঠনের ধরনের সঙ্গে এখানকার ভাষাগুলোর নিবিড় সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্ক হচ্ছে এক ভাষার সঙ্গে আরেক ভাষার বৈরিতার, পর করে রাখার। এই ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীদের ইতিহাস। যারা ভাষা সৃষ্টি করেন সেই সাধারণ মানুষের ইতিহাস এ নয়। কারণ ইতিহাসের আসল স্রষ্টা এই সাধারণ মানুষ এখনো চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হননি। তারা এখনো মানুষের ইতিহাস লেখার সুযোগ পাননি। এর আগ পর্যন্ত বর্তমানে বিজয়ী যারা আছেন তাদের পাঠের সামনে বিকল্প পাথ হাজির করা একটা জরুরি কাজ। সে কাজ নির্দোষ না হওয়ার দোষে দোষী। এই সংকলন তৈরি করার সময় এই কথা মনে রাখা হয়েছে। পাঠ যারা করবেন তাদের ভাবনা জগতেও কিছু তৈরি করা ছবি আছে। সেগুলো অনেকাংশে নাড়া দেবে এই সংকলন। এই সংকলন উর্দু ভাষার প্রথম থেকে সর্বশেষ নির্বাচিত ধ্রুপদি গজল কবিদের গজলের প্রতিনিধিত্বমূলক সংকলন। উর্দুর প্রথম কবি হিসেবে খ্যাত আমির খসরু এখানে আছেন। শেষ হয়েছে তিনজন কবিদের গজল দিয়ে যাদের সময়ে আধুনিক কবিতার যুগ অবিসম্বাদিত রূপে শুরু হয়ে গেছে। এই কবিরা সেই সময়েও ধ্রুপদি ধারায় কবিতা লিখে গেছেন এবং অত্যন্ত সফলভাবে গজলকে কেন্দ্র করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন। তাই তাঁরা এই সংকলনে স্থান পেয়েছেন। সমকালে প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সময় গজল আদৌ আর কবিতার প্রাসঙ্গিক রূপ হতে পারে কি না তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক উপস্থিত হয়। কিন্তু ফয়েজের মতো কবিরা যে গজলকে নতুন সময়ের কথা বলার উপযুক্ত করেছিলেন তাতে এই তিন কবির বড় ভূমিকা ছিল। এই বিচারে আধুনিক কালে কাব্যজীবন কাটানো এই কবিদের স্থান দেয়া হয়েছে। ধ্রুপদি কালের অনেক বিখ্যাত কিছু কবিদের কবিতা না পেয়ে পাঠক আশ্চর্য হবেন না। যেমন নজির আকবরাবাদী, আনিস বা দবির। এরা মূলত গজলের কবি নন। গজলের জন্য তাঁরা কেউ বিখ্যাত হননি। সংকলনের গজলগুলোর বাংলা লিপিতে মূল উর্দু উচ্চারণ দেয়া আছে, সঙ্গে বাংলা অনুবাদ। অনুবাদগুলো করা হয়েছে গদ্যে। এতে কাব্যরূপ দেয়ার কোনো সচেতন প্রয়াস নেই। অনুবাদক মনে করেন যে কোনো প্রয়োজনীয় টেক্সটের অনুবাদ একাধিক অনুবাদকের হাতে একাধিক জায়গা থেকে অনুদিত হওয়া দরকার। বর্তমান অনুবাদটি উৎস ভাষার ভাবনা ও প্রকাশের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়াস থেকে করা হয়েছে। এই অনুবাদ থেকে উর্দু না জানা বাংলা কবিরা চাইলে কাব্যরূপ দিতে পারেন। গত বিশ বছর ধরে বর্তমান গ্রন্থের সংকলনকারী তাঁর পছন্দের উর্দু গজল, শেরগুলো টুকে রেখেছিলেন। সেই পছন্দ ক্রমে নিতান্ত ব্যক্তি পছন্দের জায়গা থেকে ভারতবর্ষের ইতিহাস অধ্যয়নের অংশ হয়ে গেছে। এই বইয়ের কবিতা বাছাই করা হয়েছে এই কালপর্ব জুড়ে। তাতে ব্যক্তিগত পছন্দ গুরুত্ব পেয়েছে আবার সাহিত্যের ইতিহাসের মানদণ্ড ক্রমে স্পষ্টভাবে হাজির হয়েছে। সর্বোপরি পাঠককে নিশ্চিত করা যায় যে উর্দু ধ্রুপদি কাব্য পর্বের কোনো যোগ্য কবি এখানে বাদ পড়েননি।