একটা বিন্দু, সেখান থেকে শুরু করি, একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে গিয়ে থিতু হই, আবার ফিরে আসি, এবং আবার ঐ বিন্দুতে গিয়ে থামি, অতঃপর আবার ফিরি;-এই তো আমি, আমরা, জীবনের চক্র; কাব্যিক আবহে এভাবে শিশির মল্লিক বলেছেন জীবনের কথা। অপূর্ব সুন্দর অনুভূতি সৃষ্টি করেন তিনি। প্রশস্তিগাথা ও ভাবালুতায় আচ্ছন্ন নয়, শিশির মল্লিকের কবিতায় রয়েছে জীবনকে নানা দিক থেকে দেখার প্রয়াস ও বিশ্লেষণ; যা আমাদের বোধকে উত্তীর্ণ করে, আন্দোলিত করে প্রাণ। প্রাণের প্রকাশ হলো কবিতার অন্তর-শক্তি, আমরা দেখব, বোধ ও আবেগের সমন্বিত প্রকাশ ঘটেছে ‘বিন্দু থেকে নির্দিষ্ট দুরত্বে’ এই কাব্যগ্রন্থে। পাঠককে অনায়াসে ভাবিয়ে তোলে। যেমন একটি কবিতায় তিনি প্রশ্ন রেখেছেন-‘তুমি আছ বলেই কি আমি সুন্দর/ আমার জ¦লে থাকা?/ নাকি আমার জন্যে তোমার উপস্থিতি...’। প্রশ্নটি সরল হয়তো। তবে গভীর অর্থবহ। এই যে উপলব্ধি, এর আবেদন ইন্দ্রিয়জ না থেকে মস্তিস্কে সূক্ষ্ম অণুরণন তোলে; নিজের সাপেক্ষে অপরকে আর অপরের সাপেক্ষে নিজেকে দেখা-এই দেখার মধ্যে একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ ফুটে ওঠে এবং মানুষে মানুষে যে যোগসূত্র, প্রবৃত্তি ও বিবর্তন। এভাবেই কবির চেতনার আলোকে আমরা অনুধাবন করি নিজেকে, আমাদের চারপাশের জগৎ। আমাদের ভেতরে প্রস্ফুটিত হতে থাকে জীবনের নানাবিধ চিত্রকল্প ও দৃষ্টিভঙ্গি। কবির চেতনায় জীবনের সমস্ত তুচ্ছতা ও স্থুলতা উপেক্ষা করে আমরা বিচরণ করতে থাকি কল্পনার ডানায়। কল্পনার ডানা হতে আবার নেমে আসি চেনাজানা প্রতিদিনকার পৃথিবীতে, তবে এই আমি আর আগের আমি এক থাকি না, রূপান্তর ঘটে শুদ্ধতম মানুষে; শিশির মল্লিকের কবিতা এভাবেই আমাদেরকে পরিশীলিত করে বোধে ও আবেগে। হানিফ রাশেদীন কবি ও কথাসাহিত্যিক