চাতালে সাঁকোর বিলাপ গুঁজে রেখে কিছু কিছু জন্মভূক নিরন্তর গুমরে কাঁদেন শস্যঘ্রাণে-কবি মাজেদ বিশ্বাস তেমনি একজন, বুকে যন্ত্রণা নিয়ে হাঁটেন স্ক্রাইস্ক্র্যাপারের ভেতর দিয়ে, আনমনে, জলবিহারী ধানী জমিনের কৃষক-পুত্রের মতো বিস্রস্ত আকুতি নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করা এ কবির কাব্য-আয়োজন বিচিত্র বিষয় ও বিচিত্র শব্দপ্রয়োগের এক অপূর্ব সমাহার-তাতে প্রকৃতি প্রেম আধ্যাত্মিকতা এবং সর্বোপরি দেশপ্রেম ধরা রয়েছে নিপুণ কৌশলে। নিজের জন্মভূমি ছেড়ে বহুদূরে নির্বাসিত থাকলেও তার কবিতা পড়তে পড়তে আমরা বুঝতে পারি-তার জন্মভূমি তার হৃদপকেটে। অবাক হয়ে ভাবতে হয়, কোথায় কোনদিকে এক ছোট্ট মানচিত্রে ক্যানাস্তারা বাজে, তিনি তার ছিটকানো শব্দকণা তিল তিল করে বুনে আদরে তুলে রেখেছেন তার লেখার খাতায়, ছন্দে প্রকরণে উপমায় উৎপ্রেক্ষায়। কবিতায় তার বলবার কথাটির প্রকাশ-ভঙ্গিমা মাজেদ বিশ্বাসের একান্ত নিজস্ব। একেকটা জীবনাদর্শন নিতান্ত প্রাত্যহিকতায় বুনে দিয়ে তিনি চমৎকৃত করে তোলেন তার পাঠককে। বক্তব্য এবং ভাষার ঘোরে বিনির্মাণ করেন একেকটা দীর্ঘশ্বাস- যা উঠে এসেছে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞার নির্যাস থেকে। মাজেদ বিশ্বাসের কবিতা তাই ভাবতে শেখায়, পথচলতি তরলতাকে কখনও মৃদু পরিহাস করে, কখনও উসকে দেয় আরও, এবং পরিশেষে দাঁড় করিয়ে দেয় এ সত্যে যে-হয়তো ঝড়-ঝঞ্জা-জলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠবে হৃদয়, হয়তো দুঃসময় আছড়ে পড়বে জীবনের এধারে ওধারে, হয়তো প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায় ঝরে ঝরে যাবে জীবনের অসংখ্য চুনকাম, ক্ষয়ে আসা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে তবু আমাদের নিয়তি অনন্ত বিশ্বাসে, বিশ্বাস ‘অন্তরে অনন্ত আশা’য়।