ভুমিকা বিস্ময়কর এবং ঐশ্বরিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছন ডাঃ এডোয়ার্ড ব্যাচ। তিনি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (১৯৩৬) ব্যাচ ফ্লাওয়ার ঔষধ নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর তার যোগ্য উত্তরসূরি টেবোর, নোরা উইক, ভিক্টর বোলেন তার কাজকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে জন রাসেল এবং তার বোন নিকি মেরিসহ বর্তমানে আরো অনেকে ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করছেন। আমারা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- মাথাব্যথা, ঠান্ডা লাগা,কাশি হওয়া,পেট ব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা যেমন-শ্বাসকষ্ট,হাঁপানি,এলার্জির সমস্যা, প্রস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছি। এই প্রায় সকল ধরনের সমস্যার মূল কারণ বার্ষিকীর হচ্ছে নানা ধরনের স্ট্রেস বা চাপ। যখন আমাদের মানসিক বা মনজাগতিক অক্ষে(psychological axis) বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় তখন তার বহিঃপ্রকাশ শারীরিক পর্যায়ে(physical axis)দেখা যায়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধগুলো কাজ করে থাকে। অর্থাৎ আপনার মনোজগতের সুস্থতা আনয়ন করে আপনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ করে তুলবে ব্যাচ ফ্লাওয়ার ঔষধ।
মাতৃতুল্য প্রকৃতি এবং ব্যাচ ফ্লাওয়ার ঔষধ ডক্টর ব্যাচ বিভিন্ন গাছের ফুলের প্রকৃতির সাথে মানুষের প্রকৃতি বা আচরণের এক নিবিড় যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে আমরা আমাদের অবচেতন মনে প্রকৃতিতে বিদ্যমান বিভিন্ন গাছের ফুলের সাথে আমাদের মনোজাগতিক যোগাযোগ সম্পন্ন করার মাধ্যমে আমাদের মন, দেহ এবং আত্মাকে সুস্থ করে তুলতে পারি। এজন্য ডাঃ এডওয়ার্ড ব্যাচ বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে তার এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো তৈরি করেছিলেন। ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধগুলো সকল বয়সের শিশুদের জন্য খুবই কার্যকর। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন-অতিরিক্ত লজ্জাবোধ, ঘর-কাতরতা (Homesickness), খিটখিটে মেজাজ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পরীক্ষা ভীতি এবং বয়সন্ধিকালের নানা ধরনের সমস্যাগুলোতে খুবই কার্যকর। বয়সন্ধিকালের অনেক কিশোর-কিশোরী শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের বাবা-মা থেকে অনেক দূরে সরে আসে। সে সময় তাদের মনোজাগতিক এবং শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই নানা ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। এই স্বাভাবিক পরিবর্তন অনেকের মাঝেই নানা ধরনের অস্বাভাবিকতার জন্ম দেয়। কিশোর-কিশোরীদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধের সঠিক ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক পর্যায়ে এক সমন্বয়পূর্ণ ঐকতানের সৃষ্টি করে তাদের সুস্থ রাখবে।
ডা: এডওয়ার্ড ব্যাচের বাণী ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধগুলো আমাদের ভিতরে এক শান্ত ও সুরেলা ঐকতান তৈরি করে আমাদের আত্মাকে জাগিয়ে তোলে। এ ঔষধগুলো সকল নেতিবাচক চিন্তাকে দূর করে আমাদের মধ্যে কর্মোদ্দীপনা, বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের শারীরিক ও মানসিক পর্যায়ে সুস্থ করে তোলে। এই ওষুধগুলো আমাদের রোগকে সরাসরিভাবে আক্রমণ করার মাধ্যমে আমাদেরকে সুস্থ করে তোলে না বরঞ্চ তারা আমাদের শরীরের ভেতর থাকা জীবনীশক্তিকে সঠিকভাবে এবং ইতিবাচকভাবে স্পন্দিত করার মাধ্যম আমাদেরকে আরোগ্য করে তোলে। ব্যাচ ফ্লাওয়ার ঔষধগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের আত্মা, মন ও দেহের মধ্যে এক নিবিড় ঐক্যতানের সৃষ্টি হয় এবং এর প্রভাবে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো থেকে আমরা মুক্তি পাই। সুস্থতা, রোগ এবং সঠিক আরোগ্যের মূলনীতি যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিক পর্যায়ে একজন মানুষ সুস্থতা অর্জন করবে না বা মানসিক প্রশান্তি অর্জন করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হতে পারে না। চিকিৎসক হিসেবে একজন মানুষকে সুখ এবং প্রশান্তি দেওয়ার মাধ্যমে আপনি তাকে সবচেয়ে ভালো উপহার প্রদান করতে পারেন। একজন মানুষ যখন আত্মিক ও মানসিক পর্যায়ে সুস্থতা অর্জন করে তখন তার বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত সমস্ত রোগ-ব্যাধির লক্ষণও দূর হয়। একজন মানুষের পরিপূর্ণ আরোগ্য তখনই হয় যখন তার আত্মা প্রশান্তি পায় এবং তার মনোজগতে এক ধরনের প্রশান্তির অনুভূতি বহমান থাকে। মানুষের মনের মধ্যে থাকা লোভ,ঘৃণা,হিংসা,অহংকার,লালসা ও কুমন্ত্রণা ইত্যাদি নানা নেতিবাচক বিষয়ের কারণে তার মনোজগৎ কলুষিত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এই কলুষিত মনের রোগ তার মনকে ছাপিয়ে দেহের বিভিন্ন অসুস্থতার জন্ম দেয়। এর কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্রনিক বা জটিল অসুখে ভুগতে থাকি।
ডাঃ এডোয়ার্ড ব্যাচের জীবনী ডক্টর এডোয়ার্ড ব্যাচ লন্ডনের University College Hospital থেকে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে তিনি House surgeon হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ২০ বছরের অধিক সময় জেনারেল প্র্যাকটিস করেছেন এবং তার চেম্বার ছিল লন্ডনের Harley Street এ। পরবর্তীতে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং প্যাথলজিস্ট হিসেবে তিনি ভ্যাকসিনের উপর গবেষণা করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় তিনি হোমিওপ্যাথির মুলনীতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জীবাণুকে শক্তিকরণ করে হোমিওপ্যাথিক নোসোড জাতীয় ওষুধ তৈরি করেন যা আমরা এখন অন্ত্র নোসোড(Bowel Nosode) হিসেবে জানি। যদিও প্র্যাকটিস জীবনে তিনি সফল ছিলেন এবং তবুও তার ভিতরে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের অসন্তোষ জন্ম নিয়েছিল। কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন যে প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের চিকিৎসকেরা সাধারণত রোগের নামের উপর বেশি জোর দিচ্ছিলেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা করে যাচ্ছিলেন কিন্তু প্রকৃত অর্থে তারা একজন রোগীর গভীরতম সমস্যার দিকে বা সমস্যার গভীরে যেতে পারছিলেন না। যে কারণে ক্রনিক বা জটিল রোগগুলো পরিপূর্ণভাবে আরোগ্য করতে পারছিলেন না। তারা এক ধরনের জোড়াতালি বা প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা(Paliative treatment) বা ম্যানেজমেন্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এডোয়ার্ড ব্যাচের এ ধরনের চিকিৎসার প্রতি মন থেকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি উঠে গিয়েছিলো। ঘটনাচক্রে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং হ্যানিম্যানের বইগুলো পড়ে এবং তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনার সাথে এর মিল খুঁজে পেয়ে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যায়ন শুরু করলেন।তিনি পরবর্তীতে লন্ডন হোমিওপ্যাথিক কলেজে প্যাথলজিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন গবেষণা কার্য পরিচালনা করেন। এখানেও তার নিজস্ব জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূলনীতিকে আরও সহজ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং এ বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি মানুষের অন্ত্রে থাকা জীবাণুকে শক্তিকরণ করে নোসোড ভ্যাকসিন তৈরি করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্রনিক বা জটিল অসুখ চিকিৎসা করার বাস্তবিক পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি অনেক সফল হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে অন্ত্র নোসোড হিসেবে আমরা বর্তমানে হোমিওপ্যাথিতে এ ওষুধগুলো ব্যবহার করছি। তিনি প্রকৃতির মধ্যে বিদ্যমান ঐশ্বরিক ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করেছিলেন এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মানুষের প্রায় সকল ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসা এই প্রকৃতির মধ্যে আছে। তিনি বিভিন্ন গাছের ফুল নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন এবং তা রোগীদের ওপর প্রয়োগ করতে থাকলেন। তিনি রোগীদের বিভিন্ন মানসিক লক্ষণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ফুল থেকে প্রস্তুত ব্যাচ ফ্লাওয়ার ঔষধ ( যা বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়) রোগীদের বিভিন্ন মানসিক লক্ষণের উপর প্রয়োগ করেছিলেন এবং তাদের অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি বিস্ময়ের সাথে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে প্রায় সব ধরনের মানসিক লক্ষণগুলো কোন না কোন ফুলের নির্যাস থেকে প্রস্তুত ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করা সম্ভব হচ্ছে। তারই আবিষ্কৃত ওষুধগুলো দিয়ে তিনি একজন রোগীর মানসিক পর্যায়ে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের বিশৃঙ্খলাকে আরোগ্য করছিলেন এবং বিস্ময়ের সাথে পর্যবেক্ষণ করে দেখছিলেন যে এর ফলশ্রুতিতে তাদের দেহ ও মনে প্রকাশিত লক্ষণগুলোও সম্পূর্ণভাবে দূর হয়ে যাচ্ছে। যখন তিনি তার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন তখন ১৯৩০ সালে তিনি তার জাঁকজমকপূর্ণ হার্লি স্ট্রিটের বিদ্যমান প্র্যাকটিস ছেড়ে দিলেন এবং লন্ডন ত্যাগ করলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার জীবনের বাকিটা সময় তার এই নতুন ওষুধগুলো দিয়ে মানুষের সেবা করে যাবেন কারণ তিনি দেখতে পেয়েছিলেন এই প্রত্যেকটি ওষুধের মধ্যে প্রকৃতির নির্ভেজাল, অকৃত্রিম ও ঐশ্বরিক আরোগ্যকারী ক্ষমতা রয়েছে। তিনি সবকিছু ছেড়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৬ বছর বিভিন্ন বনে জঙ্গলে ঘুরে বিভিন্ন গাছের ফুল সংগ্রহ করেছিলেন। বিভিন্ন গাছ ও ফুলের সাথে প্রকৃতির নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া যেমন- সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, মেঘ, বজ্রপাত ইত্যাদি নানা ধরনের বিষয়ের প্রতিক্রিয়াগুলো খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। অবশেষে দীর্ঘ গবেষণার পর বিভিন্ন ফুলের গাছের নির্যাস থেকে ৩৮ টি ঔষধ তৈরি করলেন। এদেরকে তিনি নাম দিলেন ব্যাচ ফ্লাওয়ার রেমিডি। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে প্রত্যেকটা মেডিসিন মানুষের কোন না কোন মানসিক অবস্থা ও আবেগীয় পর্যায়ের সাথে পরিপূর্ণভাবে মিলে যায়। তিনি বিস্ময়ের সাথে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিলেন যে যখন তিনি একজন মানুষের নেতিবাচক মানসিক ও আবেগীয় লক্ষণগুলোকে সঠিক ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধ দিয়ে দূর করছিলেন তখন তাদের শারীরিক পর্যায়ের লক্ষণগুলোও খুব সুন্দরভাবে দূর হয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ১২ টি ফুলের নির্যাস থেকে ওষুধ তৈরি করেছিলেন। তাদেরকে তিনি নাম দিয়েছিলেন The Twelve Healers এবং এদেরকে নিয়ে তিনি ১৯৩৩ সালে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ডক্টর ব্যাচ যখন কোন রোগীর চিকিৎসা প্রদান করতেন তখন তিনি তাদের মানসিক অবস্থা ও আবেগীয় পরিবর্তনগুলো খুব মনোযোগ সহকারে খেয়াল করতেন এবং এর ভিত্তিতে তিনি ঔষধ নির্বাচন করতেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন আবেগীয় পর্যায়ের বিশৃংখলা থেকেই অসুস্থতার জন্ম হয়। তিনি রোগীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মানসিক লক্ষণগুলো খুঁজে বেড়াতেন যেমন-আত্মবিশ্বাসের অভাব, অন্যের সমালোচনা করা, কর্তৃত্ববাদীতা, ভীরুতা, অধৈর্য, একাকিত্বের অনুভূতি, ভয়-আতঙ্ক, রাগের বিভিন্ন বহিঃপ্রকাশ, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি বিষয়ে খুব সুন্দর ভাবে খেয়াল করতেন এবং ঔষধ নির্বাচন করতেন। উদাহরণস্বরূপ- যখন একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস কম থাকে তার জন্য Larch ঔষধ, আবার যখন কারো মধ্যে কোন জানা বিষয়ের প্রতি ভয় থাকে তার জন্য Mimulus এবং যখন একজন ব্যক্তি নিজেকে সবসময় দোষী বলে সাব্যস্ত করে তাদের জন্য Pine ওষুধটি প্রযোজ্য। অর্থাৎ তার পর্যবেক্ষণ মতে মানব জাতির প্রায় সমস্ত ধরনের নেতিবাচক মানসিক ও আবেগীয় লক্ষণগুলো এই ৩৮ টি ওষুধের মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলেন যে একই নামের অসুখে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে আবেগীয় ও শারীরিক পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়। একই অসুখে হয়তো একজন তার মনের কষ্টগুলোকে লুকিয়ে রেখে বাহ্যিকভাবে হাসিখুশিভাব দেখাতে চায় আবার অনেকেই হয়ত একই অসুখে প্রচন্ডভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে চায়। ডাক্তার এডওয়ার্ড ব্যাচের মতে রোগের নাম একই হলেও এই দুই জন ব্যক্তির জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হবে এবং তাদের জন্য অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ নির্বাচন করতে হবে এবং সেটা নির্বাচন করতে হবে তাদের এই পরিবর্তিত মানসিক ও আবেগীয় পর্যায়কে প্রাধান্য দিয়ে।
১৯৩৪ সালে ডক্টর ব্যাচ অক্সফোর্ডশেয়ারের মাউন্ট ভেরন নামক এলাকায় স্থানান্তরিত হোন। এখানে তিনি আরও ২৬ টি নতুন ওষুধ আবিষ্কার করেন এবং তার ব্যাচ ফ্লাওয়ার রেমিডির পরিপূর্ণতা দান করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, পর্যবেক্ষণশক্তি এবং দীর্ঘ গবেষণার ফলশ্রুতিতে আমরা বর্তমানে ৩৮ টি ব্যাচ ফ্লাওয়ার ওষুধ হাতে পেয়েছি যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের অনেক চিকিৎসক ডাক্তার এডোয়ার্ড ব্যাচের নীতিকে অনুসরণ করে বিভিন্ন রোগীদের ক্রনিক এবং জটিল চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ডক্টর ব্যাচ ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৭ শে নভেম্বর একটি শান্ত সন্ধ্যায় তিনি এই ইহজগত ছেড়ে পরলোকে গমন করেন। তিনি আমাদের মাঝে যদিও মাত্র ৫০ বছর বেঁচে ছিলেন তবুও তার এই স্বল্পকালীন জীবনে তিনি তাঁর গবেষণার এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে চিকিৎসা পদ্ধতি মানব জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন তার মাধ্যমে আজও সারা বিশ্বের লাখো মানুষ প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছে। ডক্টর এডোয়ার্ড ব্যাচের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অর্জনগুলো নিচে দেওয়া হল: • L.R.C.P- Licentiate of the Rooyal College of Physicians. • M.R.C.S- Member Royal College of Surgeons • B.S-Bachelor of Surgery • D.P.H- Diploma of Public Health