ভূমিকা বাংলায় বা বাংলাদেশে ফোকলোর চর্চার সময়কাল কম নয়; পাদ্রী মিশনারিদের কথা বিবেচনায় আনলে এই চর্চা শতাব্দীকাল পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। তবু ডিসিপ্লিন হিসেবে এর চর্চা বা গবেষণা খুব বেশি উচ্চতায় পৌঁছেছে এমন দাবি করা যাবে না। এর নেপথ্য কারণ অনেক কিছু বলা যাবে; প্রথমত দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৃত্তাবদ্ধ ও টাইপ্ড চর্চায় নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছি। বেশির ভাগ ফোকলোর গবেষক এ অঞ্চলের মৌখিক সাহিত্য সংগ্রহ ও সেসবের সাদামাটা বিবরণ দিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে মৌলিক গবেষণার রীতি-পদ্ধতি নিয়েও বিশেষ কোনো কাজ করা হয়নি। ফোকলোর নিয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় যে তত্ত্ব পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে বোঝা যায় এই বিদ্যাশৃঙ্খলা নিয়ে তাদের গবেষণা কতটা ধারাবাহিক ও বিদ্যায়তনিক। কারণ যে-কোনো শাস্ত্র কতটা একাডেমিক উচ্চতায় পৌঁছেছে তা নির্ভর করে সেই গবেষণায় অনুসৃত তত্ত্ব ও রীতি-পদ্ধতি এবং এর সঠিক প্রয়োগের ওপর। সমাজ-সংস্কৃতির নানা বিবর্তনের ধারায় ফোকলোর গবেষক কী কী তাত্ত্বিক কাঠামো উদ্ভাবন করতে পারবেন এবং প্রয়োগ করতে পারবেন এর উপাদান নিয়ে, তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের ফোকলোর চর্চার মান। আমাদের দুর্ভাগ্য যে উপাদানের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও ফোকলোর চর্চাকারীগণ তাদের চর্চার সাথে তত্ত্ব ও পদ্ধতির সমন্বয় করতে পারেন নি। কেউ কেউ ইউরোপীয় বা আমেরিকান তত্ত্ব পদ্ধতিকে কোনো সময় অক্ষমভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। আর, অন্যদল এইসব তত্ত্ব ও পদ্ধতির বইগুলো আত্মস্থ না করেই বাংলায় অনুবাদ করেছেন; কখনোবা একটা অসার বস্তু পাঠক বা নবীন গবেষকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। ফলত, নতুন গবেষক যারা ফোকলোরের তাত্ত্বিক কাঠামো বা এর প্রয়োগ নিয়ে কাজ করতে চেষ্টা করেছেন, তারা হোঁচট খেয়েছেন। বলাবাহুল্য, বেশির ভাগ চর্চাকারী এ পথে পা বাড়াতে সাহস পান না। অথচ এতদিনে আমাদের দেশের উপাদান নিয়ে নিজস্ব তত্ত্ব ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করা উচিত ছিল। নব্বই দশকের শেষ পর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ এই ডিসিপ্লিনে এখন সঠিক অর্থে স্বল্প হলেও প্রকৃত চর্চা ও গবেষণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।