কবিতার জগৎ এক অসীম অভিব্যক্তি দিয়ে তৈরি। আমরা পরিচিত শব্দবন্ধের ভেতরে আমাদের চেনা জগৎ আবিষ্কার করি। যে ভাষায় কথা বলি, আমাদের মুখের, কাছের ভাষা কবিতায় তুলে আনি। কিন্তু এই যে চেনা শব্দগুলো যখন আমাদের অনুভবের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন ধ্বনিব্যঞ্জনায় মূর্ত হয় তখনই আমাদের ইউরেকা ঘটে। সাহিত্যের ভাষায় তাকে বলি ইপিফোন। প্রফেসর ডা. সুধাংশু শেখর বিশ্বাসের অসংখ্য ইপিফোন আছে যেখানে তিনি অভিব্যক্তির চূড়ান্তে পৌঁছে আনন্দিত। তার চারপাশের চেনা জগতের যেসব সংকট, অসংগতি, রাজনৈতিক দোলাচল সবকিছু তিনি ছুঁয়ে ছেনে দেখতে চান। তার প্রতিবাদের ভাষা স্লোগান নয় বরং এক নান্দনিক কণ্ঠশৈলীতে আবিষ্ট। ‘মানুষ কবে মানুষ হবে’ কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে দিলে পাঠক বুঝবেন কবির অতিস্বর কীভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জিজ্ঞাসার জন্ম দেয় : ‘যুগের পর যুগ কেটে যায় আঁধার কেন কাটে না? মানুষ আসে মানুষ যায় সভ্যতাও এগিয়ে যায়। দেশকাল পাত্র বদলায় মানুষ কেন মানুষ হয় না!’ ক্রমবিবর্তমান বিশ্বে প্রতিটি প্রাণী অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। বাঁচার যে অদম্য আগ্রহ তা জীবজগতের ধর্ম। মানুষ শুধু বাঁচতে চায় না, অমর হতে চায়। এই অমরত্বের রহস্য আছে কবিতার কেন্দ্রে। এ জন্যে বহু রাজন্য, বিজ্ঞানী, লেখক, কবি, মহাকবি তাদের সৃষ্টির সৌকর্যের আলো ছড়িয়েছেন। আমরা সব কবির অন্তরাত্মার যে আকুতি মানব ও প্রকৃতি প্রেম তাকে আবাহন করি। কবিতাকে সাম্প্রতিক করে তোলায় আধুনিক বোধ দিয়ে কাল পরিক্রমার সাথে সংযুক্ত করা, সমকালের ভাষা ও প্রকৌশলকে করায়ত্ত করে নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করা একজন প্রাজ্ঞ কবির কাজ। কবি সুধাংশু শেখর বিশ্বাস সেই কাজটি যথাযথভাবে করার প্রয়াস পেয়েছেন। তার আন্তরিক প্রয়াসের সাথে পাঠক একাত্ম হবেন এটা কামনা করি। কবিতার বই বিক্রি তেমন হয় না, কিন্তু কবিরাই সবচে উচ্চারিত নাম। দান্তে, গ্যেটে, শেকসপিয়র, মিল্টন, পাবলো নেরুদা, মায়াকোভসকি, রসি পাস্তারনাক, বোদলেয়ার, র্যাঁবো, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ বিশ্বসাহিত্যের বিপ্লবী সব কণ্ঠস্বর আমরা শুনতে পাই সকল দুঃসময়ে, সকল সংকটে। ডা. সুধাংশু শেখর বিশ্বাস ‘যখন সন্ধ্যা নামে’ গ্রন্থের সবগুলো কবিতায় মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ঐতিহ্য ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। কবি হিসেবে এই সততাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। পেশায় চিকিৎসক, সেবামূলক কাজের সাথে তার সম্পৃক্ততা। তার সাথে যুক্ত হয়েছে কাব্যিক মূল্যবোধ। এক জীবনে এই অর্জনের সাথে যুক্ত থাকা শ্রমসাধ্য। তবু কবির এই শৈলী চর্চাকে আমি সাধুবাদ দিই। তার কবিতার পথ আনন্দময় হোক। জয় হোক কবিতার। রেজাউদ্দিন স্টালিন
সুধাংশু শেখর বিশ্বাস ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার প্রত্যন্ত বিলের মধ্যে মধুপুর গ্রামে জন্ম। বাবার চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন। পড়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে। এসএসসি পাস করেছেন ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এইচএসসি পড়েছেন বরিশাল বিএম কলেজে, খুলনা বিএল কলেজে। কিন্তু পাস করেছেন যশোর সিটি কলেজ থেকে। অর্থনীতিতে অনার্সসহ গ্র্যাজুয়েশন করেছেন যশোর এমএম কলেজ থেকে। অর্থনীতিতে মাস্টার্স, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্ত ছিলেন 'ছাত্র ইউনিয়ন' 'উদীচী' 'খেলাঘর'-এর সাথে। সাংবাদিকতা করেছেন যশোরে 'দৈনিক রানার' পত্রিকায়। পরবর্তী জীবনে সরকারি চাকুরে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে কর্মজীবন শুরু। মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন ইউএনও হিসেবে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও পিরোজপুরে কাউখালী উপজেলায় এবং এডিসি হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলায়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিএ, বগুড়ার পরিচালক ছিলেন দীর্ঘদিন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ, সরকারি কাজে ঘুরেছেন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।