ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলা ভাষার মুষ্টিমেয় যে কজন প্রত্যয়ী লেখক ও গবেষক আছেন, তাদের মধ্যে জুলফিকার নিউটন অন্যতম। সে প্রসঙ্গেই কিছু বলুন না তিনি তাঁর বক্তব্য শুনতেই হয়। তাঁর চিন্তা ঝজু ও যুক্তিপূর্ণ, মতামত দ্বিধাহীন ও অভিজ্ঞতাপুষ্ট। প্রসঙ্গ সাময়িক হলেও জীবনবোধ থেকে উৎসারিত বলে প্রতিটি মতামত অমূল্য।
‘বঙ্গবন্ধু গান্ধী লেনিন’ প্রবন্ধগ্রন্থে মননের সঙ্গে উপলদ্ধির এক অসাধারণ রাসায়নিক সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে এক সম্পূর্ণ জীবনবোধ। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও স্থপতি, মার্কসের সমাজচিন্তা, মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ, মহামতি লেনিন, বিশ্ব মানবতাবাদ, বিপ্লবের তত্ত্বচিন্তা, নবজাগরণ ও গণজাগরণ, রবীন্দ্রনাথে স্বদেশচিন্তা, সমাজতন্ত্রের সমন্বয়, মৌলবাদের উৎস সন্ধানে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, রাজনীতির চালচিত্র, প্রগতির পরিক্রমা সম্পর্কে এই প্রবন্ধগুলি। সব মিলিয়ে এক ব্যাপক বিশ্বদৃষ্টি এ নিগৃঢ় জীবনবোধ। চিন্তার স্পষ্টতায়, ভাষার স্বচ্ছতায়, বিশ্লেষণের ব্যাপকতায়, উপলদ্ধির গূঢ়তায়, প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় জুলিফিকার নিউটনের প্রবন্ধগুলি আক্ষরিক অর্থেই প্রবন্ধ। তাঁর একটি লেখাকেও অস্বীকার করা যায় না। এক কথায় নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না তাঁর চিন্তার যুক্তি পরস্পরাকে। তিনি সেই বিরল প্রাবন্ধিকদের একজন যার রচনা পরবর্তীকালে হারায় না প্রাসঙ্গিকতা, যার চিন্তা আমাদের বহু ভাবনাচিন্তার সমস্যা সংকপেটর জট ছাড়াতে, কর্মপন্থা নির্বাচন করতে সহায়ক হয়ে ওঠে।
জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধের প্রায় সর্বত্রই অসামান্য অন্তদৃষ্টি ও ভাষার নিপুণতা লক্ষণীয়। তাঁর বৈদগ্ধ এবং সংবেদনশীলতা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিকতা এবং যুক্তিবিন্যাসের দৃঢ়তা, তাঁর ভাষার গতিশীলতা লাবণ্য পাঠক হিসাবে আমাদের অভিভূত করে। সাম্প্রতিক লঘুচিন্তার আবহে বীতশ্রদ্ধ, পেশূন্যজরিত প্রতিন্যাসের আঘাতে আর্ত, কোন এক সদাশয় পাঠক যদি বাংলা ভাষায় মননশীল এবং সরস সাহিথ্যের স্বাদ পেতে চান তবে তাঁর পাঠ্যক্রমে জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধাবলীকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সূচি * গণতন্ত্রের মূল্যবোধ * বঙ্গবন্ধুঃজাতির পিতা ও স্থপতি * ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু * স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু * মার্কসের সমাজচিন্তা * মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ * মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষচন্দ্র * মহামতি লেনিন * বিপ্লবের তত্ত্বচিন্তা * কমরেড হো চি মিন * বিশ্ব মানবতাবাদ * নবজাগরণ ও গণজাগরণ * মৌলবাদের উৎস সন্ধানে * রবীন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তা * সমাজতন্ত্রের সমন্বয় * ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র * রাজনীতির চালচিত্র * প্রগথির পরিক্রমা
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের বনেদী কাজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কৃতিমান ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর সাথে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসুর) সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, সিনেট সদস্য, নন্দন পত্রিকার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দেশ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, আমন্ত্রিত বক্তা, গবেষণা ও বিশেষজ্ঞতার ভূমিকায় সংযুক্ত ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ এবং প্রবন্ধ-গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিক্ষেত্রেই জুলফিকার নিউটনের সংবিৎ সক্রিয় ও সুপ্রকাশ। তাঁর গল্প-উপন্যাস যেমন প্রীতিপদ, অনুবাদ সাহিত্য যেমন সুখপ্রদ, প্রবন্ধ ও গবেষণা তেমনই কোন না কোন দিক থেকে চমকপ্রদ। সব সময়ই তাঁর আলোচনায় থাকে চিন্তাকে উসকে দেবার মত অজস্র উপাদান, নতুনতর দৃষ্টি কোন বিচারে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষুরধার বিশ্লেষণ। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভিত্তিতে সাহিত্যে মৌলিক গবেষণা অনুবাদ ও জীবনবাদী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের জন্য আনন্দমেলা, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রংধনু স্বর্ণপদক, রূপসী-বাংলা স্বর্ণপদক, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, গান্ধী গবেষণা পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু একাডেমী, রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল একাডেমী, সুভাষচন্দ্র পদক এবং কবীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।