শুরুতেই বলে রাখি উর্দূ ও ফার্সি ভাষায় আমি প-িত নই। তবে উর্দূ ও ফার্সি ভাষা সামান্য বুঝতে ও বলতে পারি। এই সামান্য জ্ঞান নিয়ে উর্দূ ও ফার্সি ভাষার ‘গজল’ ও শের-শায়েরীর’ একজন অনুরক্ত মাত্র। ব্যক্তিগত জীবনে ঢাকায় দীর্ঘকাল বসবাস এবং প্রতিবেশী বেশ কিছু উর্দূভাষী পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত ও কাব্যরসিক। তাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের বাংলাভাষা ও সাহিত্যের ব্যাপারেও বেশ আগ্রহী ছিলেন। আমার এবং আমার কয়েকজন বাঙালী বন্ধুর সঙ্গে এদের প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে- বিশেষ করে সাহিত্য ও কবিতা নিয়ে আলোচনা হতো। এরা প্রায় সবাই; বেশ ভালো বাংলা বলতে পারতেন এবং বাংলা কবিতার ভাবও ছন্দ নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন। এদের মধ্যে যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে একজন জনাব সুলতান আহমদ এবং অপরজন জনাব জামিল আহমদ। এ দু’জন ছাড়াও সালেহীন নাজমী, আফতাব আহমদ-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের কাছে বিভিন্ন সময় উর্দূ শায়ের ও ফার্সি গজল শুনে ভালো লাগতো। উর্দূ কবিতার চিত্র কল্প, বাকসংযম, গভীর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি। ফলে ভালো শায়ের শুনলেই লিখে রাখতাম, শিখে নিতাম। মাঝে মাঝে এ সব কবিতা আমার সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে আবৃত্তি করে শুনাতাম। এতে তারা খুবই আনন্দিত হতেন ও প্রশংসা করতেন। আর আমিও বেশ উৎসাহিত বোধ করতাম। চাকরি জীবনে আমি একজন আর্কিভিস্ট ছিলাম। সে সুবাদে প্রাচীন নথিপত্র, বাংলা, ইংরেজীসহ সংস্কৃত ও ফারসী ভাষায় লিখিত দলিল দস্তাবেজ নিয়ে গবেষণা ও কাজ করার সুযোগ হয়। পেশাগত কারণে গবেষণামূলক কয়েকটি বই রচনা করায় পাঠক- সুধীজনের কাছেও তা বেশ সমাদৃত হয়। তাদের উৎসাহ ও অনুরোধে উর্দূ ও ফার্সি ভাষায় রচিত কবিতা এবং গজল বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করার অনুরোধ উদ্যোগ নিই। প্রকৃতপক্ষে তাদের কাছ থেকে উৎসাহ ও প্রশংসা পেয়েই ‘শের-শায়েরী‘ উর্দূ ও ফার্সি’ লিখার প্রয়াস পেয়েছি। উর্দূ কবিতায় প্রধানত নারী, প্রেম, বিরহ ইত্যাদি বেশি প্রকট। ফার্সি কবিতায় অধিকাংশই দার্শনিক তত্ত্ব, প্রেম মিলন, রোগ-চিকিৎসা, দুঃখ ও আনন্দ পরস্পর সংমিশ্রিত। যেসব কবিদের নাম সংগ্রহ করতে পেরেছি তাদের নাম উল্লেখ করেছি। যাদের নাম সংগ্রহ করতে পারিনি তাদের ‘অজ্ঞাত’ বলে প্রকাশ করলাম। আমি কবিতার আক্ষরিক অনুবাদ করিনি। অনুবাদে কবির মনের ভাব প্রকাশ ও বিশ্লেষণ করে একটি ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি। যতটুকু সম্ভব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। কতটা সফল হয়েছি তা পাঠকই বলতে পারবেন। মূল কবিতা ভাষান্তরিত করতে কিছু কিছু ভুল বা অশুদ্ধি থাকা বিচিত্র নয়। ভুল সংশোধনের সুযোগ এলে তা অবশ্যই করবো।