‘কবিতার সৃষ্টি হয় নিজস্ব নিভৃতির একান্ত মহল থেকে’ সেই নিভৃতি আবার নিবিড়তার রাজসিক প্রাসাদটি আশার আবেষ্টনীতে ঘেরা। সেখানে অন্য কারুর কোনো প্রবেশাধিকার নেই। আপন চৈতন্যের পাহারায় তা’ গড়ে ওঠে। সাহিত্যের নতুন নবাগতদের আবাহন, শুভাষিস জানিয়ে বড়ো বড়ো নামজানা, মশহুর লেখকগণ স্তূতিবাক্য বর্ষণ করেছেন। আমি আর কোন কেউকেটা। আমাকেও সেই পথেই অনুসরণ করতে হবে। সুরমা খন্দকার সম্ভবত কাব্যের বাগানে নবীন মালাকর। মালঞ্চে নতুন পসরা সাজিয়ে মালা গেথে তুলবে। তার কাব্যের নাম ‘বিরহের ভূমিতে প্রেমের চাষবাস।’ এই নবীন ‘কবিতা কৃষাণী’ প্রেমের চাষবাসে তার প্রণয়ের ক্ষেত্রখামারকে শস্যময় করে তুলবে। এটাই তো প্রত্যাশার কথা। একগুচ্ছ কবিতায় সুরমা খন্দকার প্রেম প্রণয়ের জমিনটিকে শস্যময় করে তুলতে প্রয়াস পেয়েছে। তার প্রেমানুভূতির নিভৃতি-নিবিড়তা তাকে কোনো সময়ে সফলতার স্বর্ণদুয়ারে পৌঁছে দেবে বলে এই বিশ্বাসটুকু জন্মেছে আমার। এই বইয়ের কতিপয় কবিতার পঙ্ক্তি উদ্ধৃতি করে কিছু উদাহরণ টানতে পারি। যেমন- দেউলিয়া তৃষ্ণা ‘তোমাকে চাইতে চাইতে তৃষ্ণা বিতৃষ্ণায় কী ভীষণ রকম কাঙাল হয়ে যাই।’ অতৃপ্তি, বিচ্ছেদের যে আসক্তি, বেগানা ব্যথা দোল দেয় দিনের শেষ বেলায়। তীরে উঠা কতো কঠিন যে বুঝে, সে তো পরে ব্যথার অঞ্জলি রঙ হারিয়ে ফেলা অনন্তকালকে যে ভালোবেসে, আকাঙ্খা ও তার কাছে ছন্নছাড়া মিথ্যে ভেলায় ভাসে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ছেঁড়া পালে সমর্পিত সমূদয় আর্তনাদ। একান্ত গোপন প্রদেশে উতলা উৎসুক, দেউলিয়া তৃষ্ণা আর বিষাদ।’ এই যে ‘একান্ত গোপন প্রদেশে উতলা উৎসুক, দেউলিয়া তৃষ্ণা আর বিষাদ’ এখন একজন কবির আততি বিষণ্ন হ’য়ে ওঠে ভারী বিষাদময়। এই অন্তনীল বিষাদময়তাই কবির ঐশর্য ও বিজ্ঞময় বৈভব। এক দীর্ঘশ্বাস এই কবিতায়- সুরমা খন্দকার তার দীর্ঘশ^াস আখ্যায়িত করেছে এ রকমভাবে- আমাদের ছিল এক দীর্ঘশ্বাস ভিতর জুড়ে রক্তের হাহাকার বিদীর্ন হৃদয় বসবাস। কতোটা উতলা হলে নদী নতজানু হয়ে ছুঁয়ে যায় ভূমি। কতোটা ভালোবাসলে হৃদয় খাঁটি হয়ে, হয় দীর্ঘশ্বাসের মরুভূমি কতোটা একা হয়ে চাঁদ বিরহভরা জোছনা দেয় কতো শূন্যতা চাপালে বুকে কলকল কান্না রয়। কবির কান্নায় চন্দ্রিমাও বিরহবিধুর হ’য়ে ওঠে। বেদনায় মূহ্যমান হ’য়ে পড়ে। কবির কান্নায় বিরহ-বন্যায় নিখিল ক্রন্দসীও যেন কেঁদে ওঠে। এই ক্রন্দন হাহাকার কবির একান্তই নিজস্ব। তার ব্যক্তিসত্তার মাধুর্য। আল মুজাহিদী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ‘একুশে পদক প্রাপ্ত’ সম্পাদক, ‘নতুন একমাত্রা’
জন্ম: কবি সুরমা খন্দকার, প্রকৃত নাম উম্মে মুমেনীন। তিনি নোয়াখালীর জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৭৬ সালের ১০ জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন। সাহিত্য চর্চা: এক সময় কবিতাকে গুরুত্ব দেননি, কিন্তু মনের ভিতরে নান্দনিক কাব্যিকতার বিচ্ছুরণ কবিকে ব্যাকুল করে তুলে। যার ফলশ্রুতিতে কলম চলতে থাকে মনের অজান্তে। মফস্বল শহরে বড় হওয়ার সুবাদে আশির দশকের শহর আর গ্রামের সমাজবদলের মনস্তত্ত্ব খুব কাছ থেকেই দেখেছেন । যা তার কবিতাতেও ফুঁটে উঠেছে কিছুটা হলেও। নোয়াখালী কলেজে পড়ার সময় থেকে লিখলেও মাঝখানে নানান ব্যস্ততার কারণে লেখা গতি পায়নি। পরিবারের উৎসাহে আবার কবিতা লেখা শুরু করেন । স্বামী মো: জামাল উদ্দিনসহ পুরো পরিবারের অনুপ্রেরণায় কবিতা লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। তার লেখা প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ "বিরহ ভূমিতে প্রেমের চাষবাস" প্রকাশিত হয় বইমেলা ২০২২। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "বেদনা কবিতার কথকতা" ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত। এছাড়াও বেশ কিছু যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরো কিছু বই।