‘সুগন্ধের পদচিহ্ন' অংকন প্রয়াসী কবি আফলাতুন নাহার শিলু চলমান শতকের দ্বিতীয় দশকের কবি, যিনি সময়ের ব্যবধানে পাঠকের সামনে উপস্থিত করেন নিজেকে। এ উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ এর চমক থাকে না, থাকে ঘি এর পিদিমের স্নিগ্ধতা। আপাদমস্তক শিল্প বিবেচনায় কবি আফলাতুন নাহার শিলুর কবিতা অনবদ্য ঘ্রাণ ও নান্দনিক চেতনা চর্চার উর্বর উপত্যকা, যা অনুধাবন করতে শুধু ইন্দ্রিয় গভীরতাই যথেষ্ঠ নয়, হৃদয়কেও হতে হবে দেখার চোখ। আফলাতুন সমকালীন কবিদের নেতৃত্বদানকারি কিংবা তাদের দূত হতে চাননি, শুধু শীতের সকালে নিস্তরঙ্গ দিঘিতে গা ভাসানো মাছের মতো মানুষের মনের জলাশয়ে মৃদু দোলা দিতে চেয়েছেন। তাই তিনিই বলতে পারেন। ‘অশান্ত স্বভাবকে গৃহবন্দী করো, দাও নিজেরে প্রবোধ, আরো দিন আসুক, পৃথিবীটা বাঁচুক, স্বজনকে বুকে নিয়ে করো যত আনন্দবর্ষণ।’ কবি মনের চোখে দেখেছেন জীবনঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলো। মানুষের নিত্যকার ভাবন, প্রতিদিনের যাপন, অনুভূতির হৃদ-লিখনকে এঁকেছেন এই গ্রন্থটিতে, এঁকেছেন স্বকীয় সহজতায়। কঠিন কথাটিও বলেছেন স্পর্শময় সহজিয়া দোহনে। ‘সে আমার ছোট ভাই! আমরা একে অপরের হাত ধরে হাঁটিনি কোনদিন, পাখির দলের মত একসাথে উড়ে যাইনি গৃহে। আমাদের শরীরে রক্তের গ্রুপও এক নয়! কিন্তু, সে আমার ছোট ভাই!’ গ্রন্থটিতে সময়কে ধরেছেন দক্ষতায় ও অপরিমেয় ভালোবাসায়। সময়ের দহন, সময়ের ক্ষরণ অংকিত হয়েছে হৃদয়খচিত রুধিরে। ‘বারণ না মানা বিবর্ণ মানুষের দল সভয়-কৌতুকে হাসি দিয়ে করো বিশ্ব ভূবন চকিত! অতিমাত্রার শখের বশে ছোটো শুধু শহরের শপিংমলে কলরব করো সম্মুখপানে কে আগে, কে পিছে!’ কবির অনুভূতিতে ঝড় তুলেছে মানুষের স্বাধীনতাহীনতা। ত্যাগ ও ভোগের সমান্তরাল নিক্বণ এর ছন্দোবদ্ধ দ্যোতনায় বলেছেন ‘স্বাধীনতা মানে তোমার ভিতরে ঔজ্জ্বল্য দান করে বিলীন হয়ে যাওয়া স্বাধীনতা মানে ত্যাগের শিকার হতে হতে দীনতাকে গ্রহণ করা। স্বাধীনতা মানে সত্যের সাথে তোমাকে মিলিয়ে বার বার পরখ করা স্বাধীনতা মানে সমঝোতার সাথে মিতালী স্থাপন করা।’ কবি আফলাতুন নাহার শিলু জীবনের বাইরেও ভেবেছেন, উপলব্ধি করেছেন সম্পূর্ণ জীবনানন্দ ও বিষাদময়তা, অনুভূতির সুখে উড়ে যেতে হয় শিমুল তুলোর মতো। সময় যেমনই হোক তিনি তা বরণ করেছেন সানন্দে। এ গ্রন্থে কবি স্বীয় অনুভূতির প্রতি সৎ আছেন। ভালোবেসেছেন নিজেকে এবং পাঠককেও। তাই পাঠকের কথাগুলো কবির কলমে উঠে এসেছে। কবির হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসাসিক্ত গ্রন্থটি নিশ্চয় পাঠকপ্রিয়তা পাবে। কবি আফলাতুন নাহার শিলুর সৃজনময় দীর্ঘ জীবন প্রত্যাশা করছি। শেলী সেনগুপ্তা কবি, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক