জীবনের বৃক্ষ থেকে ঝরে পড়া পাতারা গল্প হয়ে ফোটে। গল্প লেখেন গল্পকারেরা । কি গল্প বা কেমন গল্প লেখেন গল্পকারেরা? গল্পতো বিবিধ বিচিত্র অনুসঙ্গে সৃজন যন্ত্রনায় গল্পকারের নিমার্ন বোধে ডুব সাঁতার খেলে। সেই খেলার অন্যতম কারিগর সায়মা ইসলাম। বাস করেন টাঙ্গাইল। নিস্তরঙ্গ নীচে কতো ক্লেদ, বিবমিষা, হাহাকার, যন্ত্রনা, পাওয়া ও না পাওয়ার বেদনা, আনন্দবিহার, মর্মরিত রক্তউল্লাস নিরপেক্ষ দৃষ্টি ব্যঞ্জনায় দেখেন তিনি গভীর যতনে। দেখেই বসে থাকেন না, দেখা খড়কুটোর মধ্যে থেকে তুলে আনেন দরদী অন্তরআত্মায় সজিব গল্পের আখ্যান। ‘ঘুণপোকার জলসাঘর’ প্রথম গল্পগ্রন্থ হলেও প্রতিটি গল্প ছলনার অলৌকিক জলের মন্থনে সাজানো। আমাদের প্রতিদিনের আটপৌরে উঠোন বাড়ি বারন্দা রান্নাঘর বা বেডরুমের চরিত্রগুলোই বড় বাস্তব লীলায় তুলে এনেছেন গল্পকার সায়মা ইসলাম। বইয়ের গল্পগুলো প্রতিটি চরিত্র সাজানো সাপ বাগানের বিষাক্ত ফুলের জলসায় নৃত্য করছে— পড়তে পড়তে এমনটাই জেগে উঠবে পাঠক সত্তায়। বিশ্বাস কিভাবে ঘাতক হয়ে ওঠে, সেই নিনাদ বিস্তার ‘ঘূণপোকার জলসাঘর’। ‘জালবন্দি ঘোলাে— বিপরীত ভাবনায় দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আসে। শত টানা পোড়নের মধ্যে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও অসহায় দম্পতি— তাকিয়ে দেখে, উপভোগ করতে পারে নাÑ ‘ইলশেগুঁড়ি’ গল্পের নিবিড় পটভূমি। পরিস্থিতির জটিলতা মানুষকে কতো দ্রুত অসম্ভব সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ‘পোকামাকড়ের জীবন অথবা যুদ্ধের গল্প’ গল্পের শাকিলই প্রমাণ, সুরি শহরের দালান কোঠার ভিড়ে বিন্দুর চেয়েও বিন্দু পরিমান একটা স্মপ্ন দেখেছিলো— ফুল বিক্রি করে জীবন চালাবে। কিন্ত..... গল্পকার সায়মা বাস্তবতার করাতে দেখান— রক্ত মাংসের ফুল গল্পে, সুরিদের কোনো স্বপ্নই নেই। ‘ঘুণপোকার জলসাঘর’ গল্পগুলো তুলে এনেছেন গল্পকার জীবনের হালখাতা থেকে পরম অভিজ্ঞানে। - মনি হায়দার কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমি, ঢাকা—১০০০