কমলের এমন অপ্রকৃতিস্থ এবং অসম্ভব রাগ দেখে ঋতু কি বলবে না বলবে ভেবে না পেয়ে যেমন হন্ত-দন্ত হয়ে দৌড়ে এসেছিল তেমনি সে চলে গেল। সে নিজেদের বাসায় না গিয়ে রিমিদের বাসায় কি মনে করে গেল। রিমিদের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়েই সে রিমির জোরে জোরে কান্নার শব্দ শুনতে পেলো। তবুও সে দরজায় টোকা দিল। দরজার টোকা শোনে রিমি কান্না থামিয়ে দিলো নতুন বিপদ আশংকায়। নাদিম উঠে এসে দরজা খুললো। খুব মেজাজি গলায় ঋতুকে বললো, এত রাতে কি হয়েছে? আবার এসেছিস কেন। কি চাস? তোরা কি চাস অপুরা আমাদের জ্বালাক। রিমিকে এসিড মেরে ঝলসে দিক? সমমাত্রায় মেজাজ নিয়ে ঋতু বললো, নাহ্ আমি তা চাই না। আমি শুধু জানতে এসেছি নিতু আপু এসেছে কিনা। উত্তেজিত নাদিম কি-একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল। ওকে থামিয়ে দিল রিমি। রিমি বিছানা থেকে উঠে এসে ঋতুকে ঘরে নিয়ে এলো এবং জিজ্ঞেস করলো। বাসার কি অবস্থা এখন। বাসার অবস্থা বাদ দাও ভাবী। নিতু আপুকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা-মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তাদের একথা জানায়নি এখনো মা-বাবা জানলে মারা যাবে। আমি কি করবো ভাবী। রিমির কোলে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঋতু। আমি কোথায় খুঁজবো নিতু আপুকে? আমাকে বুদ্ধি দাও ভাবী। আমাকে সহায়তা কর। ঋতুর মাথায় বুলাতে বুলাতে রিমি ওর ব্লাউজের বুকের ভেতর থেকে একটি ভাঁজ কাগজ বের করে ঋতুর হাতে দিল। দিয়ে বললো, এটা নিতুর চিঠি। ও দিয়ে গেছে চাচা-চাচীকে। ওকে খোঁজার প্রয়োজন নেই। খুঁজে কোন লাভ হবে না। সে যে কোথায় গেছে আমি নিজেও তা জানি না। আমাকে বলে যায়নি। শুধু এই চিঠিটা আমার টেবিলের উপর রেখে গেছে। ঋতু চিঠিটা খুলে পড়লো ‘মা’ আমাকে খুঁজো না। খুঁজে কোন লাভ নেই। আমাক পাবে না। যদি জীবনে কখনো মানুষ হতে পারি। নারীর খোলস শরীর ছেড়ে মানুষের খোলস পড়তে পারি। সেদিন আমি আসবো। সেদিন আমাকে পাবে তার আগে নয় আর যদি জীবনে কখনো নারীর খোলস বদলাতে না পারি তাহলে আর কখনো আমাকে পাবে না আমি আসবো না। আমার জন্য যেমন তোমাদের কষ্ট হবে- তোমাদের জন্যও আমার কম কষ্ট হবে মা।