জন্ম জীবনকে একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়। তাই জন্ম জীবনের মহোৎসব। আমাদের প্রথম জন্মদাতা মা এবং বাবা। দ্বিতীয় জন্মসূত্র শিক্ষক। বলা উচিত, শিক্ষক জ্ঞানবিশ্বের প্রাণসূর্য। এই জ্ঞানালোর সর্বোচ্চ বিদ্যাবাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়। আমার জ্ঞানের বিশ্ববাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যা লয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সত্তর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জন্মেছি। ধাত্রীঘর বাংলা বিভাগ। পড়েছি বাংলা ভাষা-সাহিত্য, সঙ্গে বিশ্বসাহিত্য। পড়ার গভীরতর অর্থ হচ্ছে শিখন-শেখা বা চর্চা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষকেরা যা’ এবং যতটুকু শিখিয়েছেন, আমি স্বমেধায় নিয়েছি। তাঁদের শিক্ষা দানের মৌলপাঠ ছিল মনস্বিতা, জীবনার্থের মানবিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিল্প-জ্ঞান। মনস্বী জ্ঞানের আলোকিত বর্ণমালা বাণীবদ্ধ হয়ে গ্রন্থ হয়। বাঙালির শ্রেষ্ট সাহিত্য-মনীষা বঙ্কিমচন্দ্ৰ-মধুসূদন দত্ত-মীর মোশাররফ হোসেন-কায়কোবাদ-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুধীন দত্ত-বিষ্ণু দে-জীবনানন্দ দাশ-সুকান্ত ভট্টাচার্য-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। তাঁদের জীবনবোধ-সৃষ্টিকর্ম-শিল্পচিন্তন চিন্তা-চেতনায় প্রখর হলো। জড়িয়ে পড়ি আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জটিল জালে। পাঠ্যসূচি প্রথাগত-সাংগঠনিক রূপান্তর মূলক ব্যাকরণের দুর্গম বিধিবিধানসূত্র। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই আত্মবোধের আলো জ্বালিয়ে দিলেন, ‘জ্ঞানই আলো’ ‘জ্ঞানই সত্য, জ্ঞানই সুন্দর’ ‘জ্ঞানই শক্তি’। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানগর্ভে যখন জন্মেছি' গ্রন্থে দশজন বিদগ্ধ-বরেণ্য শিক্ষক : ড. নীলিমা ইব্রাহিম, ড. আহমদ শরীফ, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ড. কাজী দীন মুহম্মদ, ড. রফিকুল ইসলাম, ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, ড. সৈয়দ আকরম হোসেন, ড. হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস ও অধ্যাপক মনসুর মুসা-র একশ’ আশিটি তারিখ ভিত্তিক শ্রেণিভাষণ গ্রন্থিত হয়েছে। তাঁদের মন্ত্রকণ্ঠ্য বিদগ্ধ বক্তৃতাগুলো বাঙালি-মনীষার স্বরূপ-স্বাতন্ত্র্য ও মানবিক আত্মরূপে বিশ্বদর্শন। শিক্ষকের জন্মঋণ অপরিশোধ্য। শিক্ষক শিক্ষার্থীর চোখে জ্ঞানের আলো বিনিময় করেন। সেই আলোতে আমাদের পথ চলা। তাঁদের কণ্ঠ্যভাষ্যে আমাদের ভাষা। আত্মকৃতির আলো তাঁদেরই নৈতিক সৌন্দর্য-সৃষ্ট বিভা। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। শিক্ষার আলো ছাড়া পৃথিবী অচল-অন্ধ। আঁধার পৃথিবীর মন শিক্ষকের জ্ঞানসূর্যে আলোকিত হোক।