শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির এক অবিনাশী চেতনার নাম। টুঙ্গিপাড়ার খোকাবাবু থেকে জাতির জনক ও বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার তেজোময় পথচলায় মুজিব বাঙালি চেতনায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। বিশ্ব দরবারে জ্যোতির্ময় মুজিব বাংলার আনাচেকানাচে পরম পূজনীয় ও শ্রদ্ধার অমোঘ উৎস। জন্মের একশো বছর পেরিয়েও মুজিব স্বমহিমায় চিরঞ্জীব। তাঁর জীবনাদর্শ, রাষ্ট্রচিন্তা, সমাজদর্শন এখনও সমুজ্জ্বলে প্রাসঙ্গিক। আজ তাঁর রচিত সোনার বাংলার উত্তরাধিকার বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সমাসীন করেছেন গৌরবের পরাকাষ্ঠা হিসেবে। মুজিবের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপন আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বাঁশিঅলার প্রতি এক অসীম কৃতজ্ঞতাবোধের ইঙ্গিতবাহী। যাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এদেশের শোষিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত ও মেহনতি মানুষের কথা ভেবেছেন। এবং জীবনের চার আনা সময় এদেশের স্বাধীনতার বীজমন্ত্র মাথায় নিয়ে জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আপাদমস্তক মৃত্যুর হুলিয়া ধারণ করে ঘুরেছেন দেশের এপ্রান্ত ওপ্রান্তে। যিনি রাজরোষের ভয়ে কখনও তটস্থ হননি। মচকাবেন তবু ভাঙবেন না এ টাইপের নিজস্বতা তাঁকে সবসময় ধ্রুপদী খ্যাতিতে আসীন করেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বাতন্ত্র্য ও সাত্ত্বিক সত্তা অবারিত ভালোবাসার মিনার হিসেবে অক্ষয় থাকবে এ বাংলায়। শালপ্রাংশু মুজিবের প্রতি জাতির অত্যুৎকৃষ্ট তারিফের শোণিত প্রবাহ বহমান থাকবে কালেকালে। এটি যেমন ধ্রুব সত্য ঠিক একইভাবে বঙ্গবন্ধু নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট কাল কিংবা নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যে চর্চার বিষয় হয়ে থাকবে না। প্রত্যুৎপন্নমতি বঙ্গবন্ধুকে জানা, বুঝা ও ধারণ করা এটি ভোরের শুকতারার মতো চির জাগ্রত থাকবে। তা প্রত্যাশা করি। বিশ্বাসও করি। ২০২০ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও করোনা অতিমারির তাণ্ডবে সমস্ত আয়োজন মিসমার হয়ে যায়। যার দরুন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুজিববর্ষের সময়কাল প্রলম্বিত করে স্বাধীনতার ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ বর্ষ ২০২১ এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে। তা অনেকটা অনিষ্টে ইষ্ট লাভের মতো সোনায় সোহাগায় রুপান্তর ঘটে। সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষকে ঘিরে দেশ বিদেশে বহুলভাবে মুজিব বন্দনা কম করা হয়নি। বহুমাত্রিকভাবে রচিত হয়েছে সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র ও অনুষ্ঠিত হয়েছে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম। ঠিক এমনই একটি ইতিহাস াশ্রয়ী সময়ে দাঁড়িয়ে অনলবর্ষী বক্তা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসীম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু : জন্মশতবর্ষে কবিতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থটি আমাদের একটি পরিশ্রমলব্ধ সামষ্টিক সৃষ্টি। এ কাব্যগ্রন্থটি বাংলাদেশের নাফের অববাহিকায় গজিয়ে ওঠা লোকালয় টেকনাফ থেকে জাতির রাহবার বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের মতো কিছু মুজিব অনুরাগীদের এক টুকরো চাঁচাছোলা অনুরক্তি সমেত। এ বইটি আলোর মুখ দেখবার ক্ষেত্রে যিনি গোড়া থেকে পানি ঢেলে ঢেলে ফুলে ফলে সুশোভিত করে এপর্যন্ত নিয়ে এসেছেন, তিনি আমাদের পরম সম্মাননীয় ভূতপূর্ব স্কুলশিক্ষক অশীতিপর শ্রী দুলাল পাল। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও এ মানুষটির প্রাণপ্রাচুর্য এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ আমার কাছে বরাবরই অত্যাশ্চর্য ঠেকে। এছাড়া লেদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্রদ্ধাস্পদ নজির আহমেদ, ঝিমংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অগ্রজপ্রতিম কবি মুহাম্মদ ইসমাঈল বকুলের অবিশ্রান্ত নিবিষ্টতা ‘বঙ্গবন্ধু : জন্মশতবর্ষে কবিতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের কাজকে সফলতার শিখরে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার স্নেহাস্পদ জাহেদ হোসাইন পুলক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র লুৎফর রহমান সিকদার ও হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ রফিকের শ্রমনিবিড় সহায়তা অনস্বীকার্য। সশ্রদ্ধ চিত্তে কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ টেকনাফ উপজেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মোর্শেদের প্রতি। তিনার বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ ও সহযোগিতা বইটির অগ্রযাত্রা শাণিত করেছে। কক্সবাজারবাসীর গর্বের ধন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক প্রটোকল আপাত বিরত রেখে আমাদের অধিকার অনুরোধে গা ভাসিয়ে গ্রন্থটি সম্পর্কে দুদণ্ড সময় ব্যয় করে ভেবেছেন, তারজন্য অনিঃশেষ সাধুবাদ। সবশেষে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা তৃতীয় চোখের সত্ত্বাধিকারী শ্রদ্ধাভাজনেষু কবি আলী প্রয়াসের প্রতিও অশেষ ভালোবাসা। তিনি অতীব আন্তরিকতা নিয়ে বইটির আদ্যোপান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। এবং রীতিবিরুদ্ধে গিয়ে নিদারুণ খেটেছেনও। যাঁদের মূল্যবান সৃষ্টি বইটি সংকলনে ওজস্বী ভূমিকা রেখেছে, তাঁদের সৃজনশক্তির প্রতিও অপরিসীম প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আশা করি ‘বঙ্গবন্ধু : জন্মশতবর্ষে কবিতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থটিতে পাঠকমহল আগাগোড়া বঙ্গবন্ধুকে অনায়াসে ধরতে পারবেন এবং গ্রন্থটি রসসিঞ্চনী আধার হিসেবে পাঠকের অন্দরমহলে সৌষ্ঠবভাবে জায়গা করে নিবে। তথাপি আমাদের নিঃস্বার্থ পরিশ্রম ও জাতির জনকের প্রতি ঋণদায়স্বরূপ ঐতিহাসিক এ সংকলনটি পরিপূর্ণতা পাবে। সর্বোপরি সবার নির্মল আন্তরিকতার প্রতি কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। এবং বিনয়াবনত হৃদয়ে প্রিয় পাঠকের প্রতি বইটির ছোটোখাটো দোষত্রুটি মার্জনার চোখে দেখবার অনুরোধ রাখছি।