।। শব্দের তারুণ্যে ভরা কাব্যগাঁথা ।। শব্দের নিপুণতা, বিষয় বৈচিত্র্য অর্থবহ উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং অনুপ্রাসের চমক আসে, কিন্তু পাঠকের বোধ সৃষ্টি হয়না বা ছুঁয়ে যায় না; সে কবিতা পাঠে মনের তৃষ্ণা পূরণ করে না। কবিতায় শব্দের ও স্বপ্নের চাষাবাদ অনিবার্য। শব্দের প্রেময়িক প্রেমই কিন্তু কবি জীবনের সমগ্র চৈতন্য ধারণ করে না এবং এটা চূড়ান্ত কোনো ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ নয় শুরুটা হয়তো অন্যভাবে হয়। এ ক্ষেত্রে জার্মান কবি রিলকে তরুণ কবির উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করেন: “তুমি তোমার মধ্যে আত্মস্থ হও এবং যে উৎস থেকে তোমার জীবন জেগেছে, সেই উৎসের গভীরতাকেই নির্ণয় কর। সৃষ্টিধর্মী শিল্পের জন্য প্রয়োজন একটি নিজস্ব বিশ্বসংস্থ্যা; সেসব কিছু নিজের মধ্যে পাবে। পাবে প্রকৃতির মধ্যে, যে প্রকৃতি সে নিগুঢ়তার অংশ। তুমি তোমার একাকিত্বকে ভালোবাসতে শেখো এবং সুসঙ্গত আর্তনাদে সেই একাকিত্বে বেদনাকে প্রকাশ করে।” কবিতা কেন এতো জরুরী ? কেন তার এতোটা পরিচর্যার প্রয়োজন? প্রয়োজন এজন্যই যে, হাজার বছর থেকে মানুষের মুখে মুখে যা উচ্চারিত হয়ে আসছে, তা কেবল কবিতাই। প্রবন্ধ বা অন্য কোনো গদ্য নয়। সুতরাং, এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকাটাই তো স্বাভাবিক। প্রয়োজনটা এজরা পাউন্ডও বুঝেছিলেন। আর তাই তিনি বলেছিলেন, “কবিতার একটি সঙ্গত এবং সংহত উদ্ভাবন আছে। কবিতার বিশেষ সুক্ষ্ম তাৎপর্য গদ্য-স্বভাবকে অতিক্রম করে সঙ্গীতের স্বভাবের কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। প্রতীক, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষা কবিতার নিগুঢ়তম রহস্যকে পাঠকের চিন্তা এবং বিশ্বাসের নিকটস্থ করে।” এটাই মূলত কবিতার বিশেষত্ব। অর্থহীন শব্দ, বাক্য, উপমা বা সামঞ্জস্যহীন চিত্রকল্প কেবল পাঠককে ক্লান্ত বা হতাশাই করে না, কবিতা থেকে তাদেরকে দূরেও ছিটকিয়ে দেয়। সুতরাং কবিতার ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ কথাটি আপেক্ষিক। নান্দনিক চিন্তা, বোধ, শক্তি ও শিল্প একটি নতুন সুর দিয়েছে আজকের কবিতায়। এই সুর নিরন্তর এবং নির্মাণ করেছে একটি নতুন প্রেক্ষাপট, কাব্যের শক্তিশালী ইমারত। শব্দের তারুণ্যে ভরা এ নির্মাণ আরো শক্তিশালী করুক বাংলা কবিতার জগতকে। কবি জিল্লুর রহমান রচিত ‘ওপারের ডাক’ কাব্যগ্রন্থে সে বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। ৫৪টি কবিতা রয়েছে এ কাব্যগ্রন্থে। কবিতাগুলো পাঠকের কাছে সুখপাঠ্য হিসেবে গৃহীত হবে, এ প্রত্যাশাই রাখছি। আর তরুণ কবি জিল্লুর রহমান লালনের প্রতি রইলো অশেষ প্রীতি ও শুভেচ্ছা।