মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় অর্জন। আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমাদের জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিমধ্যে পঁয়ত্রিশটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই পঁয়ত্রিশ বছরের অধিকাংশ সময় জুড়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারবিরোধী অপশক্তির করতলগত ছিল। ওরা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহকে একের পর এক আঘাত হেনে হয় ধ্বংস করেছে নয়তো বিকৃত করেছে। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ যুগান্তকারী সব পরিবর্তনের সূচনা করেছে এবং আমাদের জাতি গঠন প্রক্রিয়াকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি এর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেই মুক্তিযুদ্ধের পঁয়ত্রিশ বছর পরও আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। শতমুখী আক্রমণে ছিন্ন-ভিন্ন, ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হলেও মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে উৎসারিত মানবিকতা, মুক্তচিন্তা, প্রগতি, সৃষ্টিশীলতা এবং নবনির্মাণের আলোকচ্ছটাকে কেউ নেভাতে পারবে না। তবুও পেছন ফিরে দেখা দরকার পঁয়ত্রিশ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকচ্ছটা আমাদের সমাজ-অর্থনীতি রাজনীতি শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি ও শিল্পকলাকে কতটা প্রভাবিত করেছে। পঁয়ত্রিশ বছরের অর্জন-বিসর্জন ও অভিজ্ঞতাকে বহুকৌণিক আলোকসম্পাতে পুনর্বিচারের চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থেধৃত প্রবন্ধনিচয়ে। লিখেছেন দেশের অগ্রগণ্য ও প্রথিতযশা লেখক, গবেষক, অধ্যাপক, শিল্পী-সাহিত্যিক-অর্থনীতিবিদ-সমাজ বিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবীগণ। প্রায় সব কটি প্রবন্ধই শ্রমসাধ্য গবেষণাধর্মী এবং মননশীল। আমাদের অন্বিষ্ট হচ্ছে স্বাধীনতা-উত্তর অতিক্রান্ত পঁয়ত্রিশ বছরে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়েছে তার একটা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকল প্রবন্ধিক-লেখকদের কাছে। তাঁদের ঋণ অপরিশোধ্য। আমাদের প্রত্যাশা বইটি পাঠকের, বিশেষ করে গবেষণা কাজে নিরতদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করবে।
জন্ম : ১৭ এপ্রিল, ১৯৪৭। বিক্রমপুরের রাণীগাঁও গ্রামে। সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী লেনিন লিখেছেন কম। সম্প্রতি নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও সাময়িকীতে। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আগামীর অন্বেষা', 'ব্রাত্যজন কথা’, ‘স্বাধীনতা ও উত্তরকাল', ‘সর্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু’, ‘সমুখে শান্তি পারাবার’, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড প্রতিবাদের প্রথম বছর’, ‘স্বাধীনতার সন্ধানে, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বপ্ন', এবং মৌলবাদ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা'। এছাড়া একটি কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্ন করপুটে। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের ভেতর রয়েছে ‘তেভাগা সগ্রাম’, ‘একবিংশ শতকে অভিযাত্রা’, ‘জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরনাধারা’, ‘আওয়ামী লীগের গৌরবের OG 769', 'Valle of Death', 'Fanatic Extremism in Bangladesh', তেভাগার কথা ও বাংলার কৃষক আন্দোলন এবং দুঃশাসনের চার বছর : সংকট ও উত্তরণের পথ’ প্রভৃতি। সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক মননশীল সাময়িকী ‘পথরেখা’ ও প্রকাশিত হচ্ছে তাঁরই সম্পাদনায়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক লেনিন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং নেতৃস্থানীয় কমিউনিস্ট হিসেবে বামপন্থি। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।