শিক্ষা মানবজাতির অগ্রযাত্রার এক অসাধারণ হাতিয়ার। সূচনা থেকেই মানুষ প্রতি মুহূর্তে শিখে আসছে। ব্যক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিষয়টি বিশ্বের সকল দেশেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বলা হয়ে থাকে শেখার কোনো শেষ নাই বা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তেই মানুষ শেখে। শেখার ব্যাপারটাকে আবার আমরা দুভাবে দেখতে পারি। ক) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও খ) প্রাকৃতিক শিক্ষা। প্রাকৃতিক শিক্ষার জগতটা আপন গতিতে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে, সমাজে সমাজে বা রাষ্ট্রীয় নিয়ম নীতি, পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও দেশে দেশে তার নিজস্ব গতিতে চলে। আমাদের এই অঞ্চলে এক সময়ে সংস্কৃত টোল বা মক্তব দিয়ে শিক্ষার সূচনা হয়। ইংরেজরা তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের উপনিবেশ এই উপ মহাদেশে প্রচলন করে। আমরা বস্তুত এখনও ইংরেজ প্রচলিত শিক্ষার যুগেই বাস করছি। যদিও এর পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাসহ নানা পদ্ধতির শিক্ষার উদ্ভব হয়েছে এই অঞ্চলে তথাপি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পার করার পরও আমাদের শিক্ষার পদ্ধতি-বিষয়বস্তু বা পাঠ্যসূচি ইত্যাদি নিয়ে বারবার আলোচান করতে হচ্ছে। এরই মাধে বঙ্গবন্ধুর গঠন করা কুদরতে খোদা শিক্ষা কমিশনের পরও অনেক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। তবে কেউ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আমরা যখন ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে ২০০৯ থেকে সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করি তখন থেকেই শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন নিয়ে ব্যাপকভাবে আমাদের ভাবনা চিন্তা প্রসারিত হতে থাকে। আমি অবশ্য শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে কাজ করছি বহু আগে থেকেই। ৯৯ সালে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করে, বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যার উদ্বোধন করে বা পূর্বধলায় শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে ট্যাব দিয়ে এই কাজটি অব্যাহতভাবে চলে আসছে। এবার সরকারের পক্ষ থেকে ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাইজ করে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে আমরা একটি অসাধারণ সাহসী পদক্ষেপ নিলাম। ২১ সাল থেকে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্লেন্ডেড শিক্ষা টাস্কফোর্স গঠন করে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। ৩৫ বছর যাবত তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাস করে একদিকে আমি বাংলাকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরেও কাজ করছি। দীর্ঘদিন যাবত এসব চিন্তাগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার ঝুমঝুমি প্রকাশনীর স্নেহভাজন তিথির উৎসাহে সেই লেখাগুলোকে সংকলিত করে বই আকারে প্রকাশ করা হলো। বইটি প্রকাশে আমার চারপাশের অনেকে ঐকান্তিকভাবে আমাকে সহায়তা করেছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। মোস্তাফা জব্বার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২২
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতের কিংবদন্তীতুল্য ব্যক্তিত্ত্ব। একাত্তরের বীর মুক্তিযােদ্ধা জনাব মােস্তাফা জব্বার তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির জন্য পরিচিত হলেও তার কর্মকাণ্ড কেবল এই জগতেই সীমিত নয় । নিজগ্রামসহ দেশব্যাপী শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে তিনি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন । তার মাইলফলক কাজের মাঝে রয়েছে কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রয়ােগ, প্রচলন ও বিকাশের যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করা, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘােষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত মােস্তাফা জব্বারের পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে ।। ১৯৪৯ সালের ১২ আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানার বাড়িতে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার পাটের ব্যবসায়ী ও সম্পন্ন কৃষক ছিলেন। তাঁর দাদা আলিমুদ্দিন মুন্সি ছিলেন বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক যার উপাধি ছিলাে তালুকদার। তার মা রাবেয়া খাতুন সমগ্র জীবন গৃহিনী হিসেবেই জীবন যাপন করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কম্পিউটার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টক শাে-এর মাধ্যমে তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে চলেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও সাধারণ বিষয়ের ওপর অনেকগুলাে বইয়ের লেখক, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী জনাব মােস্তাফা জব্বার এরই মাঝে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা ও বিজয় বাংলা কীবাের্ড ও সফটওয়্যার আবিষ্কার করার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরস্কার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সােসাইটি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন ।। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলি যােগাযােগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।