প্রথম ফ্ল্যাপের লেখাঃ পঞ্চ মরমি কবির গান শিরোনামের গ্রন্থে লালন ফকির, দুদ্দু শাহ্, রাধারমণ, হাছন রাজা এবং শাহ আব্দুল করিম এই পাঁচ জন মরমি চিন্তকের গান সংকলিত হয়েছে। তাই পাঁচ জন মরমি চিন্তক একেবারেই একে অন্যে থেকে আলাদা। আমরা লালন ফকির বলতেই সেই অধ্যায় মহাপুরুষ যিনি ভাবের আধারে নিমজ্জিত একজন ভাব সাধককে বুঝি। তাঁর গানে লালনশাহী সম্প্রদায়ের সাধনার সারাৎসার যেমন মিলে, তেমনি উচ্চ মার্গের দর্শনের সন্ধানও আমরা পাই। বলা চলে লালন ফকির বিশ্বে বাঙালির দর্শন দারিদ্র ঘুচিয়েছেন। মরমি সাহিত্য বলি, দর্শন বলি আর সাধনাই বলি লালন ফকির সেখানে এক এবং অনন্য। অন্যদিকে দুদ্দুশাহ লালন ফকিরের প্রধানতম শিষ্য হওয়া সত্ত্বেও কাব্য প্রতিতায় লালন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর গানে আমরা সামাজিক ইতিহাস, সমাজবাস্তবতা, সমাজচেতনাই যেনো বেশি করে দেখা দেখতে পাই। তিনি অধ্যাত্ম সাধক হয়েও বস্তুবাদী দার্শনিক। তিনি বাউল দর্শনের একটি বাস্তবভিত্তি দাঁড় করিয়ে গেছেন তাঁর গানে। রাধারমণ ঠিক একই ভাবে বৈষ্ণব তত্ত্বের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তাঁর সমগ্র কাব্য চেতনায়। হাছন রাজা তাঁর গানে ঠিক ইসলামি সুফি দর্শনকেই যেনো বাঙালি রূপ দিয়ে পূর্ণতায় পৌঁছে দিয়েছেন। আর হালের শাহ আব্দুল করিমের গানে আমরা তাঁকে মার্ক্সবাদের এক জলন্ত সাক্ষর হিসেবে পাই। নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিলো যার আজীবনের স্বপ্ন, সংগ্রাম। তিনি মরমি হয়েও দ্রোহী এক মোড়কে ভিন্নভিন্ন স্বাদের মরমি চিন্তার উপস্থাপনা আশা করছি পাঠকের কাছে ভালো লাগবে।